Youngali Story, History, Solution, Picture, Song, Video, Scandels and Romance

Youngali Story, History, Solution, Picture, Song, Video, Romance......any thing for your one friend.

Thursday, November 05, 2009

স্বাস্থ্যকথা / স্বাস্থ্য সমস্যার

চোখ,

চোখে ঠিকমতো দেখতে না পাওয়া

বস্তু থেকে সমান্তরাল আলোক রশ্মি চোখের কর্ণিয়া বা কালো রাজার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বেঁকে যায় এবং চোখের লেন্সের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় দ্বিতীয় বার বেঁকে চোখের রেটিনায় বস্তুর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে বিধায় আমরা ওই বস্তুটি দেখতে পাই। আলোক রশ্মির এই পথ যদি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে যে কোন গঠনগত পরিবর্তন বা কোন রোগ যদি না থাকে সে ক্ষেত্রে চশমা দিয়ে সে দৃষ্টির উন্নয়ন সম্ভব। তখন সেটাকে রিফ্রাকটিভ ইয়ব বা পাওয়ার জনিত দৃষ্টি স্বল্পতা বলা হয়। এটি সাধারণত চার ধরনের হয় মায়োপিয়া (ক্ষীণদৃষ্টি), হাইপারোপিয়া (দূরদৃষ্টি), প্রেসবায়োপিয়া বা চালশে এবং অ্যাসটিগমেটিজম।

মায়োপিয়াঃ এ ধরনের রোগীরা কাছে মোটামুটি ভাল দেখতে পারলেও দূরে ঝাপসা দেখে, তাই এদের ঋীণদৃষ্টি বলা হয়। অবতল লেন্স বা মাইনাস পাওয়ারের চশমা পড়লে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। যাদের চোখে ছয় ডায়াপটারের বেশী মাইনাস পাওয়ারের লেন্স লাগে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের পাওয়ার ও বাড়তে থাকে তখন তাকে প্যাথলজিকাল মায়োপিয়া বলা হয়। সেক্ষেত্রে চোখের দেয়াল বা স্ক্লেরা পাতলা হয়ে যায় এবং রেটিনাতে ছিদ্র সৃষ্টি হয়ে পরবর্তীতে রেটিনা আলাদা হয়ে গিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। মায়োপিয়াতে চোখের আকার বড় হওয়া কারণে চোখের দেয়াল পাতলা হয়ে যায়। সেজন্য সামান্য আঘাতেই চোখে অনেক মারত্বক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং মায়োপিয়া রোগীদের সবসময় চোখের আঘাত থেকে সাবধান থাকতে হবে এবং নিয়মিতভাবে ডাক্তারের পরামর্শে চোখের পাওয়ার পরীক্ষা এবং রেটিনার পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল।

হাইপারোপিয়াঃ এ ধরনের রোগীরা দূরে এবং কাছের উভয় দিকেই ঝাপসা দেখে এবং অফিসিয়াল কাজ করার সময় রোগীর চোখের উপর চাপ পড়ার কারণে মাথা ব্যাথার অনুভূতি হয়। স্বাভাবিক চোখের চেয়ে একটু ছোট থাকে, যদিও ওটা বোঝা যায়না। উত্তল বা প্লাস লেন্সের চশমা ব্যবহার করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
অ্যাসটিগ ম্যাটিসমঃ এটি এক ধরনের দৃষ্টি স্বল্পতা, যাতে রুগীর কর্ণিয়ার সে কোন একদিকে (লম্বদিকে, প্রস্থে অথবা কোণাকোনি) পাওয়ার পরিবর্তন হয় বলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। এর কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, একটি জিনিসকে দুইটি দেখা এবং মাথা ব্যাথা হতে পারে। সিলিন্ডার লেন্স ব্যবহারে এ সমস্যার সমাধান হয়।
প্রেসবায়োপিয়াঃ এতে বয়সজনিত চোখের গঠনগত পরিবর্তনের কারণে চোখের লেন্সের ইলাসটিসিটি বা স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়, ফলে লেন্সের প্রয়োজনে (বিশেষ করে কাছের জিনিস দেখার জন্য) আকার পরিবর্তন করার ক্ষমতা কমে যায় এবং কাছের জিনিস ঝাপসা দেখায়। চল্লিশ বছরের পর এ সমস্যা দেখা যায় বলে একে চালসে রোগ বলা হয়। শুধু কাছের জিনিস দেখার জন্য (বিশেষ করে পড়াশুনার জন্য) উত্তল বা প্লাস লেন্স ব্যবহার করলে এ সমস্যার সমাধান হয়। বয়স বড়ার সাথে সাথে চশমার পাওয়ার ও পরিবর্তন হয়।
চিকিৎসা ডাক্তারের পরামর্শে রোগের ধরণ অনুযায়ী পাওয়ার চেক করে চশমা ব্যবহার করা যেতে পারে।
চশমা যারা পড়তে চায়না, তারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার বিধি একটু জটিল বিধায় অনেকের পক্ষে ব্যবহার করা হয়ে ওঠেনা।
বর্তমানে লেজসার সার্জারীর মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। এক্সাইমার লেজসার ব্যবহার করে চোখের পাওয়ার পরিবর্তন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। একে ল্যাসিক রিক্সাকটিভ সার্জারী বলা হয়। এর মাধ্যমে ১২ ডায়াপটার পর্যন্ত মায়োপিয়া, ৫ ডায়াপটার পর্যন্ত অ্যাসটিকমেটিসম এবং ৪ ডায়াপটার পর্যন্ত হাইপারোপিয়ার চিকিৎসা সম্ভব। সবছেয়ে বড় সুবিধা হল, ল্যাসিক করার পর সাধারণত চশমা অথবা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েনা।
মনে রাখতে হবে

০ বাচ্চাদের দৃষ্টি স্বল্পতার তড়িৎ চিকিৎসা প্রয়োজন, না হয় অলস চোখের কারণে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যেতে পারে।

০ কাছ থেকে সে সব শিশু টেলিভিশন দেখে অথবা টেলিভিশন দেখার সময় চোখ টেরা হয়ে যায় এবং চোখ থেকে পানি পড়ে, তাদের তাড়াতাড়ি চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল।

০ মাথা ব্যাথা চোখের পাওয়ার পরিবর্তনের লক্ষণ, সুতরাং মাথা ব্যাথা হলে একবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল।

০ ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রন না থাকলে চশমা ব্যবহার করে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়না, কারণ এতে ঘন ঘন চোখের পাওয়ার পরিবর্তন হয়।

০ যারা নতুন নতুন চশমা ব্যবহার শুরু করবেন তাদের চশমাতে অভ্যস্ত হতে ১০-১৫ দিন সময় লেগে যায়, এ সময়ে চশমা ব্যবহার অস্বস্থি লাগলেও এটি ব্যবহার বন্ধ করা ঠিক নয়।

০ যারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চান, তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার বিধি মেনে ব্যবহার করবেন।

০ সব রুগীরা সবসময় ল্যাসিক করা সম্ভব হয়না, ডাক্তারের পরামর্শে ল্যাসিক সেন্টারে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চোখ ল্যাসিক যোগ্য হলেই একমাত্র ল্যাসিক সার্জারী করা হয়।

ডাঃ শামস মোহাম্মদ নোমান
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
দৈনিক ইত্তেফাক, ০৫ সেপ্টেম্বের ২০০৯।


চোখ সুস্থ রাখতে রঙিন শাক সবজি ফলমূল

চোখ সুস্থ রাখতে হলে দরকার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান ভিটামিন ‘এ’। নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় ‘এ’ ভিটামিনযুক্ত খাবার অবশ্যই থাকা উচিত। সঠিক পরিমাণে এই ভিটামিনযুক্ত খাবার না খেলে রাতকানা রোগ এবং চোখের অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ভিটামিন ‘এ’-এর প্রধান উৎস প্রাণীজ প্রোটিন যেমন যকৃত, ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন, পনিরও মাছ। ছোট মাচ বা মলা, ডেলা, পুঁটিমাছ খেলে চোখ ভার থাকে, রাতকানা রোগ হয় না এ কথা ছোট বেলায় সকলেই শুনে থাকে। সস্তা এবং সহজলভ্য রঙিন ফলমূল শাকসবজি থেকেও প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। এসব খাবার টাটকা এবং সহজপাচ্যও বটে। গাঢ় সবুজ পাতাযুক্ত সবজি- কচুশাক, সজিনাশাক, পালং শাক, লাউশাক, নটেশাক, পুঁইশাক, সীম, বরবটি, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, পাকা আম, পেঁপে, তরমুজ, কাঁঠাল ইত্যাদি। এ জাতীয় খাবার যারা নিরামিষ ভোজী চোখ ভাল রাখার জন্য ছোটবেলা থেকেই সব ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। অল্প সেদ্ধ বা কাঁচা সালাদা, ফল ও ফলের রসের সঙ্গে অবশ্যই দুধ, দই, ছানা খাওয়া উচিত। সয়াবিন ভিটামিন ‘এ’-এর আরেকটি ভাল উৎস। বিভিন্নভাবে সয়াবিন রান্না করে খাওয়া যায়। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে অন্ধকারে দেখার উপযোগী চোখের রডকোষগুলোর কর্মদক্ষতা আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে। ফলে শিশু রাতের বেলায় কোন জিনিস খুঁজতে গিয়ে হাত বাড়িয়ে ঘুরতে থাকে এবং কোন জিনিসে বাঁধা পেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। বাচ্চা জন্মের সময় তার শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ সঞ্চিত থাকে এবং মায়ের দুধে পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ থাকায় মাতৃদুগ্ধ পান করা পর্যন্ত এই ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা হয় না। কিন্তু শিশুর যখন বাড়তি খাবার প্রয়োজন হয় তখন এই ভিটামিনের অভাব হলে চোখের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। শিশুদের চোখের যে সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায় তা হলো বিটট স্পট। এতে অক্ষি শুষ্কতার পর চোখের বাইরের আবরণে কিছু ছোট ছোট দাগ পড়ে। ফলে কর্নিয়া অস্বচ্ছ ও ঘোলাটে দেখায় এবং কর্নিয়ার অনুভূতি কমে যেতে থাকে। এর ফলে দেখতে অসুবিধা হয়। পরে কর্নিয়াতে সংক্রমণ হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। তখন শুধু ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত খাবার খেলেই চলবে না নিয়মিত ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেতে দিতে হবে। বয়স্কদের ছানি পড়া বিলম্বিত করতে ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সঠিকভাবে ভিটামিন এ যুক্ত খাবার নিয়মিত না খেলে নির্ধারিত সময়ের আগেই আলো ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।


ডাঃ জ্যোৎস্না মাহবুব খান
মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ
দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ এপ্রিল ২০০৯।


বাতব্যথায় চোখের সমস্যা

বাতরোগ হল হাঁড় এবং মাংসপেশী সম্পর্কিত। এর সাথে আবার চোখের সম্পর্ক কোথায়? ভাবতেই অবাক লাগছে তাই না? শরীরের এমন অনেক রোগ আছে যাতে চোখের সমস্যাও একটা প্রধান ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

যেসব বাতরোগে চোখের সমস্যা হয়ঃ

রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস-এতে সাধারণত হাড় এবং পায়ের ছোট জয়েন্টে প্রদাহ হয়, তার সাথে চোখের শুষ্কতা, স্ক্লেরাইটিস (চোখের সাদা অংশের প্রদাহ), কেরাটাইটিস (চোখের কর্ণিয়ার প্রদাহ) ইত্যাদি হতে পারে।

জুভেনাইল আরথ্রাইটিস হাঁটু এবং পায়ের গোড়ালিসহ ছোট বড় বিভিন্ন জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টিকারী এই রোগ সাধারণত ১৬ বছরের কম ছেলে-মেয়েদের বেশি হয়। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখে ব্যথাযুক্ত প্রদাহ বা ইউভাইটিস হতে পারে।

এনকাইলোসিং স্পনডাইলাইটিস- মাজায় ব্যথা এবং প্রদাহ সৃষ্টিকারী এই রোগে শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে চোখের সমস্যা হতে পারে। এতে চোখে ইউভাইটিস এবং স্ক্লেরাইটিস হতে পারে।

রিটার সিনড্রম- এই রোগে হাঁটু, পায়ের গোড়ালি, পায়ের আঙ্গুল ইত্যাদি অংশ হঠাৎ করে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। সাথে সাথে চোখের কনজাংকটিভা, সাদা স্কেরা, কর্ণিয়া, ইউভিয়া, দৃষ্টি স্নায়ু এমনকি রেটিনাতেও প্রদাহ হতে পারে।

চোখের সমস্যা কিভাবে বুঝবেন?

শুষ্ক চোখ- চোখে জ্বালাপোড়া, কচকচ করা, ময়লা জমা, চোখের পানি কমে যাওয়া ইত্যাদি চোখের শুষ্কতার লক্ষণ।

কর্ণিয়া ঘা- বাতরোগের সাথে সাথে কোন কোন ক্ষেত্রে চোখের কালোরাজাতে ঘা হতে পারে। চোখে ব্যথা হওয়া, পানি পড়া, আলোতে চোখ খুলতে না পারা ইত্যাদি কর্ণিয়া ঘা-এর লক্ষণ।

স্কেরাইটিস- চোখের সাদা অংশ হঠাৎ করে লাল হওয়া, প্রচন্ড ব্যথা করা, চোখ নাড়াতে অসুবিধা হওয়া এই রোগের লক্ষণ। বাতের ব্যথার সাথে সাথে আক্রান্ত চোখেও ব্যথা শুরু হয়।

ইউভাইটিস- চোখের ভেতরে রক্তনালী পূর্ণ স্তরের প্রদাহকে ইউভাইটিস বলা হয়। বাতরোগের সাথে সবচেয়ে কমন চোখের রোগ এটি। দুই চোখে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া, চোখে লাল হওয়া, আলো সহ্য করতে না পারা ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। এই রোগের কারণে কর্ণিয়ার পেছনে পূঁজ জমে এবং চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

করণীয় প্রথমত ডাক্তারের পরামর্শে বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন রক্ত পরীক্ষা, জয়েন্ট এক্সরে করার মাধ্যমে বাতরোগের ধরন সনাক্ত করতে হবে। তারপর সেই রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে। ডাক্তার সাধারণত ব্যথার ওষুধ ছাড়াও বিভিন্ন ডিজিজ মডিফাইং ওষুধ, ইমুনোসাপ্রেসর ওষুধ ইত্যাদি সেবনের পরামর্শ দেন। নিয়মিত এসব ওষুধ সেবনে রুগী অনেক আরামবোধ করেন। ডাক্তারের পরামর্শে কিছু প্রয়োজনীয় ব্যায়াম করা যেতে পারে।

বাতরোগ বাড়ার সাথে সাথে চোখে সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। সময়মত চিকিৎসা শুরু করা না গেলে চোখের প্রদাহের কারণে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাধারণত একসাথে দুই চোখ, আবার একটির পর আরেকটি আক্রান্ত হতে পারে। বাতরোগের চিকিৎসার সাথে সাথে আক্রান্ত চোখের চিকিৎসা জরুরি।

এট্টোপিন আই ড্রপ কর্ণিয়ার ঘা এবং ইউভাইটিস দুইটি রোগের কার্যকরী। স্টেরইড ড্রপ-এর নিয়মতান্ত্রিক ব্যবহারে চোখের প্রদাহ অনেকাংশে কমে আসে। চোখের চাপ বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিগস্নুকোমা ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। চোখের প্রদাহের কারণে লেন্সে ছানি পড়তে পারে। এতে দৃষ্টি কমে যেতে পারে। আইড্রপ ব্যবহার করে চোখের প্রদাহ কমলে ছানি অপসারণ এবং কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি অনেকাংশে ফিরে পাওয়া সম্ভব। বাতরোগের চিকিৎসায় যারা অনেকদিন ধরে স্টেরইড সেবন করেন তাদের চোখে ছানি এবং গস্নুকোমা রোগ হতে পারে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত অনিয়ন্ত্রিত স্টেরইড সেবন করা উচিত নয়।


ডাঃ শামস মোহাম্মদ নোমান
এম,বি,বিএস, ডি,সিও, এফ,সি,পি,এস(চক্ষু)
জুনিয়র কনসালটেন্ট, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রঃ, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম। drshams_noman@yahoo.com
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৪ মার্চ ২০০৯।


চোখের ঘাঃ কারণ ও প্রতিকার

এই রোগ কি?

আমাদের চোখের সামনের অংশে যে গোলাকার কালো অংশ দেখা যায়, তাকে কালো রাজা বা কর্নিয়া বলা হয়। কোন কারণে কর্নিয়ার প্রদাহ এবং পরবর্তীতে ঘা তৈরি হওয়াকে কর্নিয়াল আলসার বা কালো রাজার প্রদাহ বলা হয়।

কেন হয়?

- চোখের আঘাতজনিত কারণে এই রোগ সবচেয়ে বেশি হয়। আমাদের দেশে ধান কাটার মৌসুমে ধানের পাতার আঘাতের কারণে এই রোগের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। ত্ত অপুষ্টিজনিত কারণে বিশেষ করে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে শিশুদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। ত্ত যাদের চোখের পাপড়ির গোড়ায় সব সময় অপরিষ্কার রাখার জন্য প্রদাহ বা বেস্নফারাইটিস হয়, তাদের চোখে কর্নিয়ার প্রদাহ হতে পারে। ত্ত নেত্রনালী বন্ধজনিত চোখের পানি পড়া রোগের কারণেও কালো রাজার প্রদাহ হতে পারে।

রোগের লক্ষণঃ

০ আলোতে চোখ খুলতে না পারা।

০ চোখে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া।

০ চোখ লাল হয়ে যাওয়া।

০ চোখ হতে পানি পড়া।

০ চোখের কালো মণিতে সাদা দাগ বা ঘা দেখা যাওয়া ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ।

প্রতিরোধে করণীয়ঃ

০ চোখে কিছু পড়তে পারে বা চোখে আঘাত লাগতে পারে এমন পেশায় যারা নিয়োজিত আছেন, তারা কাজ করার সময় গগলস বা চশমা ব্যবহার করতে পারেন।

- চোখে কোনকিছু পড়লে, বেশি ঘষাষষি না করে পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলা প্রয়োজন। ত্ত সর্বদা নিয়মমত চোখ পরিষ্কার রাখা বাঞ্ছনীয়। ত্ত নেত্রনালীর সমস্যার কারণে পানি পড়া রোগের চিকিৎসা করিয়ে নেয়া প্রয়োজন। ত্ত কোন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেমন শামুকের পানি, চুনের পানি ইত্যাদি ব্যবহার হতে দূরে থাকতে হবে। এগুলো ব্যবহারের কারণে রোগ জটিলরূপ ধারণ করে। ত্ত ডাক্তারের পরামর্শে কর্নিয়াতে ঘা হওয়ার আগে ওষুধ ব্যবহার প্রয়োজন।

চিকিৎসাঃ

আমাদের দেশের গ্রামে-গঞ্জে কিছু কিছু হাতুড়ে চিকিৎসক চোখে বিভিন্ন রকম ক্ষতিকারক পদার্থ যেমন-শামুকের পানি, চুনের পানি ইত্যাদি দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা শুরু করেন।

পরিশেষে সম্পূর্ণ চোখে এই ঘা ছড়িয়ে পড়ে রোগ জটিলরূপ ধারণ করে।

- সুতরাং উপরোল্লিখিত উপসর্গ দেখা মাত্র নিকটবর্তী চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
- বিভিন্ন উন্নত চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্রে ঘা থেকে পুঁজ নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে সেই পুঁজে যে জীবাণু পাওয়া যায় সেই জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধের মাধ্যমে ঘা এর চিকিৎসা করা হয়।
- মনে রাখতে হবে, স্টেরইড জাতীয় চোখের ড্রপ ব্যবহারের ফলে কর্নিয়ার ঘা জটিলরূপ নিতে পারে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করবেন না।

- ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক সময়মত ওষুধ ব্যবহারে এই রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল সম্ভব।

তবে ত্বরিৎ চিকিৎসা শুরু না হলে ঘা এর গভীরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে চিকিৎসার পরেও কর্নিয়া বা কালো রাজাতে দাগ পড়ে যাওয়ার ফলে স্থায়ী দৃষ্টি স্বল্পতা হতে পারে।


ডাঃ শামস মোহাম্মদ নোমান
এম,বি,বিএস, ডি,সিও, এফ,সি,পি,এস(চক্ষু)
জুনিয়র কনসালটেন্ট
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
drshams_noman@yahoo.com
দৈনিক ইত্তেফাক, ২১ মার্চ ২০০৯।


ছানি অপারেশনঃ কৃত্রিম লেন্সের দাম ও কার্যকারিতা

হালিমা খাতুন (ছদ্মনাম) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পঞ্চাশের ওপর বয়স। এ বয়সেই তাঁর চোখে ছানি পড়েছে। ফলে ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারেন না। তিনি জেনেছেন ছানি রোগের ভালো চিকিৎসা হচ্ছে আজকাল। আগের মতো আর অপারেশনের পর দুই দিন সটান শুইয়ে রাখা হয় না। এরপর মাস দেড়েক পর মোটা কাচের চশমা ব্যবহার করতেও হয় না। আগে হাজার পাওয়ারের ওপরে, ওই চশমা হারিয়ে গেলে নতুন চশমা না নেওয়া অবধি অচল থাকতে হতো। আজকাল আর এসব নেই। চোখে অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করা হয়। ফলে রোগী অস্ত্রোপচার সম্পন্নের দিন থেকেই দেখতে শুরু করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক দিনের মতো চোখ ঢেকে রাখা হয়, পরের দিন থেকেই দৃষ্টি লাভ! কৃত্রিম লেন্স সংযোজনের দরুন পুরোপুরি দৃষ্টিপ্রাপ্তি সম্ভব। অর্থাৎ তরুণ বয়সের দৃষ্টিশক্তির মতোই দৃষ্টিশক্তি পাওয়া যায়। হালিমা খাতুন এসব জেনেই এসেছেন ছানির অপারেশন করাতে।

হালিমা খাতুন যথারীতি হাসপাতালে ভর্তি হন। অপারেশনের আগের দিন তাঁর চোখের লেন্সের পাওয়ারের মাপ নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে তিনি জেনেছেন, চোখে যে লেন্স সংযোজন করা হয় তা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। লেন্সের প্রকারভেদে মূল্য ২০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। হালিমা বাড়ি থেকে যে টাকা নিয়ে এসেছেন, তাতে ১৫ হাজার টাকার লেন্স সংযোজন সম্ভব নয়। সাধারণভাবেই তাঁর ধারণা, ১৫ হাজার টাকার লেন্স নিশ্চয়ই ২০০ টাকার লেন্সের চেয়ে অনেক ভালো।

তাঁর মনে দ্বিধা জন্মায়। একবার ভাবেন এযাত্রায় অস্ত্রোপচার না করিয়ে বাড়ি গিয়ে ধারদেনা করে টাকা নিয়ে এসে ওই ১৫ হাজার টাকার লেন্সই চোখে লাগাবেন। আবার ভাবেন, বেতনের টাকার বাইরে তেমন তো তাঁর আয় নেই! ধার করা টাকা পরিশোধ করতে বেতনের টাকায় বেশ কমাস লাগবে। কাজেই প্রয়োজন কী? তিনি তাঁর চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। চিকিৎসক জানান, চোখের ভেতর ঠিকমতো পৌঁছতে পারলে ১৫ হাজার টাকার লেন্স যা করবে, ২০০ টাকার লেন্স তা-ই করবে।
ওপরের ঘটনাটি থেকে বোঝা যায় যে রোগীরা আধুনিক চিকিৎসালয়ে এসে এক ধরনের বিভ্রান্তির শিকার হন। লেন্সের মূল্যের তারতম্যে এ বিভ্রান্তি আসাটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ বিদেশি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জিনিসের প্রতি দুর্বল। যুক্তরাষ্ট্রের লেন্স নিশ্চয়ই ভারতের লেন্সের চেয়ে ভালো! কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের লেন্স লাগাবেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত অনেক সময় নিয়ে ফেলেন রোগীরা।

এ ক্ষেত্রে লেন্স সম্পর্কে রোগীদের মনে সৃষ্ট এ বিভ্রান্তি নিরসনে চিকিৎসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকেরই দায়িত্ব হলো রোগীকে বুঝিয়ে বলা যে লেন্সের মূল্যের তারতম্য লেন্সের কার্যকারিতায় তেমন কোনো ভূমিকা পালন করে না। ২০০ টাকার ভারতীয় লেন্সের সঙ্গে দুই হাজার ২০০ টাকার যুক্তরাষ্ট্রের লেন্সের কার্যকারিতায় কোনো তফাত নেই। লেন্স সংযোজনে কোনো অসুবিধা না হলে উভয় ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের দৃষ্টিশক্তি লাভ করা যায়। তবে লেন্স পছন্দের ক্ষেত্রে রোগীর পছন্দের স্বাধীনতা অবশ্যই থাকা দরকার।

এবার আবার হালিমা খাতুনের প্রসঙ্গে আসি। হালিমা খাতুন চিকিৎসকের মন্তব্য শুনে কিছুটা আশঙ্কামুক্ত হন। তিনি তাঁর নিয়ে আসা টাকায়ই অস্ত্রোপচারের যাবতীয় খরচ নিষ্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরও তাঁর মনে একরকম খুঁত থাকে-নিশ্চয়ই ১৫ হাজার টাকার লেন্সটা হয়তো ভালো। তাঁর পাশের শয্যার ব্যবসায়ী সন্তানের মাকে ওই লেন্স লাগানো হবে। আবার তাঁর অদূরে এক পোশাকশ্রমিকের মায়ের চোখে লাগানো হবে ২০০ টাকার লেন্স।

একই দিনে তাঁদের সবার চোখে লেন্স সংযোজন হয়। একই সার্জন তা করেন। পরের দিন অস্ত্রোপচারকৃত সব রোগীর চক্ষু পরীক্ষার কক্ষে নিয়ে আসা হয়। তালিকা দেখিয়ে রোগীদের দৃষ্টি মাপা হয়। হালিমা দেখলেন তাঁর দৃষ্টি, তাঁর পাশের ব্যবসায়ীর মায়ের দৃষ্টি ও পোশাকশ্রমিকের মায়ের দৃষ্টিতে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ ১৫ হাজার টাকা, দুই হাজার ২০০ টাকা, ২০০ টাকার লেন্সের কার্যকারিতা একই স্তরের।

এবার হালিমা খাতুনের মনে আর দ্বন্দ্ব নেই। তিনি ছুটির কাগজপত্র নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হন। সঙ্গে নিয়ে যান কৃত্রিম লেন্স সম্পর্কে এক রকম ধারণা। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর পরিচিত ছানি রোগীদের এ বার্তাটাই দেবেন যে লেন্সের কার্যকারিতায় দামের পার্থক্যের তেমন কোনো ভূমিকা নেই।


মো· শফিকুল ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম আলো, ২২ এপ্রিল ২০০৯।


চশমা বদলাতে চাইলে

প্রয়োজন যখন ডায়াবেটিক রোগীর
‘ডায়াবেটিস’ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের চিনির ওঠানামার সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি পরিবর্তিত হয়। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর চশমা নেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া জরুরি-

১• চশমা নেওয়ার আগে সুগার বা চিনির মাত্রা নির্ণয় করে নিতে হবে। রক্তে চিনির মাত্রা বেশি হলে সে মুহূর্তে চশমা বদল করা উচিত হবে না। কেননা সেই সময় থেকে চশমা-পরবর্তী সময়ে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পর তা দৃষ্টিশক্তির সঙ্গে খাপ খাবে না।

২• রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে একদম স্বাভাবিক পর্যায়েই যে চিনির মাত্রা থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
তবে তা ১০ মিলিমল/লিটারের নিচে হতে হবে। খালিপেট ও ভরাপেটে রক্তে চিনির মাত্রার পার্থক্য চার মিলিমল/লিটারের ভেতর থাকা ভালো।

৩• আপনার ঘরে যদি গ্লুকোমিটার থেকে থাকে তাহলে চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার আগমুহূর্তে রক্তে চিনির মাত্রা জেনে নিন এবং তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে জানান।

পরীক্ষার্থীর যখন চশমা বদলানো প্রয়োজন
চোখ ও মাথাব্যথায় আক্রান্ত হলে পরীক্ষার্থী সন্তানকে নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ছেলেমেয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কোচিং সেন্টার থেকে ফিরে এসেই মা-বাবার কাছে মাথাব্যথা উপসর্গের কথা জানায়। ‘দূরে দেখা যায় না’, ‘সামান্যক্ষণ’ পড়াশোনা করলেই মাথাব্যথা হয়, ‘মনোযোগ থাকে না’ ইত্যাদি উপসর্গের কথা বলে থাকে। এসব ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে মা-বাবা তাদের চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফলপ্রসূ চিকিৎসা পাওয়া যায় না।

কী করবেন
?? কোচিং সেন্টার থেকে ফিরে আসার বা গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া শেষ করার পরপরই চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবেন না। কেননা এ সময় ছেলেমেয়েদের চোখ তখন ক্লান্ত থাকে। ক্লান্ত চোখের অন্তঃস্থিত পেশি স্বাভাবিক অবস্থায় না থাকায় সে সময় চোখে এক ধরনের দৃষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সময় চশমা নেওয়া হলে তা সঠিক মাত্রার হবে না। ফলে আপনার সন্তানের উপসর্গগুলো ভালো হবে না।

?? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে আপনার সন্তানের চোখের বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দিন। প্রয়োজনে যেদিন তাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাবেন, সেদিন কোচিং সেন্টারে যাওয়া বা ঘণ্টা দুয়েকের জন্য পড়াশোনা থেকে বিরত রাখুন। প্রয়োজনে তাকে ঘুমোতে দিন।

?? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে প্রথম দিকে যাতে দেখাতে পারেন সে জন্য আগেই নাম তালিকাভুক্ত করুন। অর্থাৎ পরীক্ষার্থী নিয়ে দীর্ঘ ‘সিরিয়ালের’ পরিবর্তে প্রথম দিকেই পরামর্শ নিন। এতে আপনার সন্তানের চোখের পরীক্ষাটাও ভালো হবে।


ডা• মো• শফিকুল ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক, চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক প্রথম আলো, ০৭ মে ২০০৮


চোখের যত সমস্যা

প্রশ্নঃ চশমা বানাবার পর তা কি আবার চক্ষু বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করানো উচিত?

উত্তরঃ হ্যাঁ। চশমা বানাবার পর আবারো তা পরীক্ষা করানো উচিত। চশমা আসলে একটি জটিল বিষয়। চশমা দেবার সময় কম্পিউটারে চক্ষু পরীক্ষা বা ম্যানুয়াল চক্ষু পরীক্ষা করে আবার রোগীকে অক্ষর পড়িয়ে পাওয়ার কনফার্ম করা হয়। ঐ পাওয়ারটি চশমার প্রেসক্রিপশনে লেখা হয়। চশমার দোকানে ঐ প্রেসক্রিশন দেখে পাওয়ার তৈরি করেন এবং ফিটিং এর জন্য পাঠান। সুতরাং এতগুলো ধাপ পার হয়ে আসার সময় কোথাও কোন ভুল হলো কিনা সেটা দেখার জন্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা তাঁর কোন সহযোগীকে দিয়ে পাওয়ার মাপার যন্ত্র ‘লেন্সমিটার’ এ পরীক্ষা করা উচিত।

চশমা একবার পরলে তা কি আবার ছাড়া যায়?

উত্তরঃ অনেকেই মনে করেন-চশমা একবার পরলে আর ছাড়া যায় না। আসলে কার চশমা লাগবে, কখন ছাড়া যাবে-এসবই নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির পাওয়ার এর উপর। অনেক শিশুকে ছোটবেলায় মাথা ব্যথার জন্য সামান্য পাওয়ার দেয়া হয়। কিছুদিন ব্যবহারের পর তা নাও লাগতে পারে। অনেক শিশুর ছোটবেলায় প্লাস পাওয়ার লাগতে পারে, বড় হতে হতে তার ঐ পাওয়ার আর নাও লাগতে পারে। বেশিরভাগ শিশুই স্কুলে গিয়ে প্রথম ধরা পড়ে-দূরে বস্নাকবোর্ড দেখতে পারছে না।

এদেরকে মাইনাস পাওয়ার দেবার প্রয়োজন হয়। এরা যত বড় হবে-শরীরের সাথে সাথে চোখের আয়তনও বড় হয়। তখন চোখের পাওয়ারও স্বাবাবিক এর তুলনায় বেড়ে যায়। এদেরকে তখন ভালো দেখতে গেলে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া পাওয়ার মাইনাস করতে হয় এবং চশমা অনেকদিন পরার প্রয়োজন হয়।

শিশু হোক বা বড় হোক, চোখ পরীক্ষা করে পাওয়ার এর প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। তা না হলে চোখের রেটিনার উন্নতি হবে না এবং ৬/৬ দৃষ্টি তৈরি হবে না।


ডাঃ এম নজরুল ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক, চক্ষু বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ এপ্রিল ২০০৮


চোখের যত সমস্যা

প্রশ্নঃ চশমার দোকান থেকে ‘রেডিমেড’ চশমা কিনে পরা কি ঠিক?

উত্তরঃ সাধারণতঃ বয়স ৩৫-৪০ বছর হলে অনেকেই নিকটে কম দেখতে শুরু করেন। তখন সহজেই এবং সস্তায় চশমার দোকান থেকে +১·০০ বা এর অধিক পাওয়ার এর চশমা কিনে ব্যবহার করতে শুরু করেন। ঐ চশমা দিয়ে বেশিরভাগ লোকই ভালো দেখতে পারেন এবং এতে চোখের কোন ক্ষতি হয় না। তবে ঐ ব্যক্তির জন্য শতকরা ১০০ ভাগ ঠিক পাওয়ার না মিললে-চোখে ১০০ ভাগ সঠিক দেখা যায় না এবং চোখের সহ নানা উপসর্গ হতে পারে। যে সকল ব্যক্তির দূরের ও পাওয়ার থাকে বা বাকা পাওয়ার (astigmatism) থাকে তাদের জন্য ঐ ‘রেডিমেড’ চশমা খুব ভালো কাজ করে না এবং আরামদায়কও হয় না। তাদের ক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে প্রয়োজনীয় চশমা তৈরী করে নেয়া ভালো।

প্রশ্নঃ শিশুদের চোখ কখন পরীক্ষা করানো উচিত?

উত্তরঃ যে সকল শিশুর চোখের কোন সমস্যা নেই, দেথার ও কোন সমস্যা নেই তাদের স্কুলে যাবার পূর্বে একবার পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ চোখের অনেক রোগই আছে যা বাবা-মার নজরে নাও আসতে পারে। অনেক বড় হয়ে ঐ রোগ ধরা পড়লে- সঠিক চিকিৎসার সময় পার হয়ে যেতে পারে।

এছাড়া যেসব শিশুর দেখতে সমস্যা হয়, নিকটে গিয়ে টিভি দেখে, চোখের পরিমাপ খুব ছোট বা বড় হলে, চোখের জন্মগত কোন ক্রুটি মনে হলে, চোখের মণিতে সাদা কোন দাগ মনে হলে, চোখ দিয়ে পানি পড়লে ইত্যাদি নানা সমস্যায়- যে কোন বয়সেই শিশুর চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।

প্রশ্নঃ এক চোখে না দেখলে বা কম দেখলে কি গাড়ী চালানো যায়?

এক চোখে দেখে গাড়ী চালানো গেলেও তা করা উচিত নয়। গাড়ী চালাবার সময় সোজাসুজি এবং পাশাপাশি দেখা, ঠিক রং দেখা, দৃষ্টির গভীরতা (depth of perception) থাকা, রাতে ঠিক দেখা ইত্যাদির প্রয়োজন। একটি চোখ না থাকলে বা একটি চোখে বেশি কম দেখলে ঐ সকল প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব হয় না। সেজন্যে নিরাপদ ড্রাইভিং এর জন্য এক চোখে গাড়ী চালানো ঠিক নয়। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যবশতঃ অনেক গাড়ী চালক আছেন যারা এক চোখে দেখেন না। এদের গাড়ী চালাবার সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি।


ডাঃ এম নজরুল ইসলাম
দৈনিক ইত্তেফাক, ০৫ এপ্রিল ২০০৮


চোখের ভাইরাসজনিত ইনফেকশন

সাধারণভাবে প্রচলিত কথা ‘চোখ ওঠা’ বলতে চোখ লাল হওয়া বুঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু চোখ লাল হওয়া একটি উপসর্গ মাত্র। বিভিন্ন কারণে চোখ লাল হতে পারে। যেমন-জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, এডিনো ভাইরাসজনিত কারণে, হারপেস সিম প্লেক্স ভাইরাসজনিত কারণে, স্কেলেরার ইনফেকশনজনিত কারণে, ইউভিয়াল টিস্যু ইনফেকশনজনিত কারণ ইত্যাদি। তবে ভাইরাস কেরাটাইটিস বা হারপেম সিমপেক্স ভাইরাসজনিত ইনফেকশনই মুলত ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। এ ধরনের ইনফেকশনে সাধারণত এক চোখ আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে খুব কম ক্ষেতে দুটি চোখই আক্রান্ত হয়। এতে চোখ খচখচ করে। সামান্য ব্যথা হয়। রোদে বা আলোতে তাকাতে কষ্ট হয় ও পানি পড়ে। সাধারণত ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো কমে আসে। কিন্তু দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। মণি বা কর্নিয়াতে সাদা দাগ পড়ে যায়। খালি চোখে দেখে বোঝা যায় না।

বায়ো মাইক্রোস কপি যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে সুনির্দিষ্ট করে বোঝা যায়।
এটি একটি জটিল রোগ। দেরি করে চিকিৎসা করালে সম্পুর্ণ আরোগ্য লাভ অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। তবে প্রাথমিক অবস্হায় চিকিৎসা নিলে খুব সহজেই সেরে যায়। কাজেই এক চোখ লাল হলে এবং ৩-৪ দিনের ভিতর অন্য চোখ আক্রান্ত না হলে মনে রাখবেন এটি কোনো সাধারণ রোগ নয়। শুধু এক চোখের প্রদাহ, জ্বালা-পোড়া, পানি পড়া, লাল হওয়া ইত্যাদি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

যেসব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তা হলো-ধুলাবালি, আগুন-আলো-রোদে কম যাওয়া, ময়লা-আবর্জনাযুক্ত সঁ্যাতসেঁতে জায়গায় না যাওয়া, পুকুর বা নদী-নালায় গোসল না করা, চোখে কালো চশমা ব্যবহার করা। সম্ভব হলে ১০ থেকে ১৫ দিন সম্পুর্ণ বিশ্রাম নেয়া এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া।


ডা. মোঃ মিজানুর রহমান
লেখকঃ কনসালটেন্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
দৈনিক আমারদেশ, ০১ মার্চ ২০০৮


দাঁত তুললে চোখের ক্ষতি

আমরা দন্ত চিকিৎসকরা প্রায়ই একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হই যে, দাঁত তুললে চোখের ক্ষতি হবে কিনা। এটি একেবারেই অমূলক এবং ভ্রান্ত একটি ধারণা। দাঁত প্রদাহ হলে ব্যথাটি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চোখে। পালপাইটিস (Pulpitis) নামক দাঁতের এই রোগটিই মূলত ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় রোগীদের নিকট। কেননা ব্যথাটি তখন অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে পাশের দাঁতে ব্যথা সে পাশে চোখের দিকে। আর এতেই অধিকাংশ ভুক্তভোগী রোগীগণ মনে করেন দাঁতের সাথে চোখের সম্পর্ক আছে। এছাড়াও উপরের দাঁতের শিকড়গুলো (Roots) চোখের কাছাকাছি অবস্থান-তাই এটিও রোগীদের দুর্ভাবনার অন্যতম একটি কারণ।

এই ধারণাগুলো সম্পূর্ণ ভুল। কেননা দাঁত এবং চোখ দুটি আলাদা আলাদা স্নায়ুতন্ত্রের সাথে জড়িত। এদের স্নায়ুপ্রবাহ এবং রক্তপ্রবাহ দুটিই স্বতন্ত্র।

চোখের স্নায়ুপ্রবাহ হচ্ছে অপথালমিক ডিভিশন অব ট্রাইজেমিনাল নার্ভ এবং নিচের দিকে হচ্ছে ম্যাক্সিলারি ডিভিশন অব ট্রাইজেমিনাল নার্ভ। রক্ত প্রবাহিত হয় অপথালমিক এবং ল্যাক্রিমাল আর্টারি দ্বারা। অন্যদিকে উপরের পাটির দাঁতে স্নায়ুপ্রবাহ দেয়া হলো, অ্যান্টিরিয়র পোস্টিরিয়র, মিডল সুপিরিয়র নার্ভ। নিচের পাটিতে দেয় ইনফিরিয়র অ্যালভিওলার নার্ভ ব্রাঞ্চ অব ম্যান্ডিবুলার নার্ভ।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, দাঁত এবং চোখ দুটি ভিন্ন ভিন্ন গঠনে সজ্জিত-যার একটির সাথে অপরটির কোন সম্পর্ক নেই।

লেখকঃ ডাঃ আসফিকা হোসেন জুঁই
দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০শে ডিসেম্বর ২০০৭


ডায়াবেটিসে চোখের আরও সমস্যা

ট্যারা চোখঃ দীর্ঘ সময় ধরে স্বল্প মাত্রার ডায়াবেটিসের জন্য অক্ষিপেশির অবশজনিত কারণে ট্যারা চোখ দেখা দিতে পারে। সাধারণত বয়স্ক রোগীরা এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে রোগী কয়েক দিন তীব্র মাথাব্যথায় ভোগেন, হঠাৎ করে দ্বৈত দৃষ্টির উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। দ্বৈত দৃষ্টি হচ্ছে একটি জিনিসকে দুটি দেখা। সাধারণত দেখা যায়, চোখের এ সমস্যায় আক্রান্ত রোগী নিজের অজান্তেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রয়েছেন।

ডায়াবেটিসের পরিচিত উপসর্গের অনুপস্থিতির জন্য চিকিৎসকেরাও এ অবস্থায় বিভ্রান্ত হতে পারেন। তাই বয়স্ক রোগীদের হঠাৎ সৃষ্ট ট্যারা চোখের চিকিৎসায় সতর্কতার সঙ্গে কারণ নির্ণয় করা উচিত। ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা তখন জরুরি হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিসের কারণে হওয়া ট্যারা চোখের চিকিৎসা সহজ। ডায়াবেটিসের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ও দ্বৈত দৃষ্টির সমস্যা সেরে ওঠার জন্য ট্যারা চোখটি ঢেকে দেওয়াই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট। পুরোপুরি ভালো হতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে নয় মাস। রোগীদেরও তাই কিছুটা ধৈর্য ধরতে হয়। কেননা এ ক্ষেত্রে দ্রুত ভালো হওয়ার কোনো উপায় নেই।

চোখের প্রদাহজনিত জটিলতাঃ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের সঙ্গে চোখের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত রোগও নিবিড়ভাবে জড়িত। ডায়াবেটিসের জন্য প্রদাহজনিত রোগের প্রবণতা যেমন বেশি থাকে, তেমনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সেসবের কার্যকর চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব হয় না। শুধু চোখের নয়, যেকোনো অঙ্গের প্রদাহ বা ইনফেকশনের জন্যই এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে চোখের প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসা দেওয়ার সময় ডায়াবেটিসের প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। রোগীদেরও এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। কোনো প্রদাহে আক্রান্ত হলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ছানি রোগঃ আমাদের চোখের অভ্যন্তরে একটি লেন্স রয়েছে, যা দর্শন-প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই লেন্স কোনো কারণে অস্বচ্ছ হলেই ছানি রোগ হয়। আমাদের দেশে বয়স্কদের অধিকাংশই ছানি রোগ সম্পর্কে সচেতন। এ রোগ বয়স্কদের দৃষ্টি হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ। ডায়াবেটিসের রোগীরা দুভাবে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

এক· ডায়াবেটিসজনিত ছানি,
দুই· ডায়াবেটিসের দরুন ত্বরান্বিত বয়োবৃদ্ধিজনিত ছানি।

রোগীর দেহে চিনির পরিমাণ অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেলে চোখের লেন্সের বিপাক-প্রণালীতে জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষত দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে চিনির মাত্রা ২০০ মিগ্রা/১০০ মিলি বা ততোধিক হলে ‘সোরবিটল’ অ্যালকোহলের আধিক্য দেখা দেয়, যার উপস্থিতি লেন্সের জন্য ক্ষতিকর। ফলে লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে পড়ে। এ ধরনের ছানি অল্পবয়সী ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। রক্তে চিনির মাত্রার কার্যকর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ ধরনের ছানির প্রকোপ কমিয়ে আনা সম্ভব।

দ্বিতীয় প্রকারের ছানি ইনসুলিন-অনির্ভর ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের বয়োবৃদ্ধিজনিত ছানির প্রবণতা বেড়ে যায়। কারণ হিসেবে বলা হয়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর চোখের লেন্স একই বয়সী স্বাভাবিক ব্যক্তির লেন্সের তুলনায় ১৫ বছর বেশি বয়সীর লেন্সের অবয়ব নিয়ে থাকে। অর্থাৎ যাঁর ছানি হওয়ার কথা ৫৫ বছর বয়সে, তিনি হয়তো চল্লিশেই ছানি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।


লেখকঃ ডা· মো· শফিকুল ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক, চক্ষুবিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক প্রথম আলো, ১২ ডিসেম্বর ২০০৭


আইরিসের প্রদাহ

আইরিসের প্রদাহকে আইরাইটিস বলে। আর আইরিস এবং সিলিয়ারি বডির প্রদাহকে একত্রে আইরিডোসাইক্লিআইটিস্‌ বলা হয়।

কারণঃ
আঘাতজনিত কারণে যদি চোখ ছিদ্র হয়ে যায়
বিভিন্ন জীবাণুর সরাসরি সংক্রমণে
অ্যালার্জি
নির্দিষ্ট কারণ যেমনঃ টিউবারকুলোসিস, সিফিলিস প্রভৃতি।

উপসর্গঃ
দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
চোখে ব্যথা, যা রাতে গভীর হয়
চোখ থেকে পানি পড়া এবং
আলোক সংবেদনশীলতা

চিকিৎসক সাধারণত যে বিষয়গুলো খেয়াল করে থাকেন-
চোখ লাল হয়ে যাওয়া
কর্নিয়ার ওপরে কিছু কোষের অস্তিত্ব
আইরিসের বর্ণ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
পিউপিল ছোট হয়ে যাওয়া প্রভৃতি।

চিকিৎসাঃ দৈনিক তিন-চারবার গরম সেক দেয়া উচিত। রোগীকে রোদচশমা ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে হবে। ১% এট্রোপিন আই ড্রপ বা অয়েন্টমেন্ট দৈনিক তিনবার ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত চোখটিকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। প্রদাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য হাইড্রোকটিসোন আই ড্রপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা ড্রপ এবং অয়েন্টমেন্ট দু’ভাবেই প্রয়োগ করা হয়। তা ছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা, ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ওষুধ সেবন, বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণ বন্ধের জন্য এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন এবং অবস্থা জটিল হলে সাবকনজাংটিভাল স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দেয়া হয়।

জটিলতাঃ বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধি পাওয়া, সাইনেকিয়া, চোখের ছানি তৈরি হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।


লেখকঃ ডা. সুমাইয়া নাসরীন লোপা
দৈনিক নয়াদিগন্ত, ০৬ জানুয়ারী ২০০৮


ছানির চিকিৎসায় ম্যানুয়াল ফ্যাকো

ঘটনা
স্বল্প আয়ের চিত্রশিল্পী তিনি। মফস্বলে থাকেন। দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে বেশ কিছুদিন হলো। চোখের চিকিৎসক দেখিয়ে জানতে পেরেছেন, চোখে ছানি পড়েছে। অস্ত্রোপচার করাতে হবে।

চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘ফ্যাকো করালে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাগবে।’ তাঁরা আরও বলেছেন, ‘ইদানীং ছানির অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে এক ধরনের লেন্স বেরিয়েছে, যা ব্যবহার করলে চশমার প্রয়োজনই পড়ে না! তবে এতে খরচ পড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।’ সেই বিশেষজ্ঞ (!) চিকিৎসকের মুখের দিকে বি্নয়ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তিনি। এ দেশেও ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে মানুষ ছানির অস্ত্রোপচার করায়!

চোখে অপ্রত্যাশিত ছানি পড়ার জন্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি। এবার কৌতূহলভরে চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, ‘সত্যই কি ছানির অস্ত্রোপচারের পর কোনো চশমা লাগে না?’ এবার চিকিৎসক কথা ঘুরিয়ে বলেন, ‘না, তেমন একটা লাগে না।
তবে যারা পড়াশোনা করে বা নিকটদৃষ্টির কাজ করে, তাদের সামান্য পাওয়ারের চশমা লাগে।’ এবার চিত্রশিল্পী বিভ্রান্তিতে পড়েন। একটু আগেই চিকিৎসক বলছিলেন, ‘কোনো চশমাই লাগে না’, এখন বলছেন ‘লাগে’; তাহলে কোনটা সঠিক? তাঁর সাহস হয় না চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করে বিষয়টি আরও খোলাসা করে নিতে। এ ছাড়া নিজের সামর্থেøর বিষয়টিও মাথায় আসে। তিনি ভেবেছিলেন, হাজার দুয়েকের ভেতর চোখের চিকিৎসা সম্পন্ন করবেন; সেখানে ২০ হাজার টাকা জোগাড় করা তাঁর পক্ষে দুরূহ।

ছানির অস্ত্রোপচারের জন্য এত টাকা আসলেই কি প্রয়োজন? এ ছাড়া বেশি টাকা দিয়ে অস্ত্রোপচার করালেই চোখে ভালো দেখবেন-এ ধরনের ধারণা কি ঠিক? আমাদের দেশে ইদানীং চিকিৎসাসেবা যেন পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। বাজার-অর্থনীতির অনুষঙ্গ চিকিৎসাজগতের দুষ্ট গ্রহের মতো উপস্থিত। গণমাধ্যমে প্রচারিত টক শো, পত্রিকার বিজ্ঞাপন ইত্যাদি থেকে ‘ফ্যাকো’ শব্দটি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। চোখের চিকিৎসকেরাও তাঁদের ডিগ্রির সঙ্গে ‘ফ্যাকো সার্জন’ শব্দযুগল জুড়ে দিয়েছেন। ছানির অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রচারণায় মানবিক দৃষ্টিকোণে রোগীর প্রয়োজনের বিষয়টি দারুণভাবে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ‘ফ্যাকো’ (Phaco) শব্দের অর্থ লেন্স। অংশীদারের চোখের ভেতরের লেন্সের গ্রিক নাম হচ্ছে ‘ফ্যাকো’।

ফ্যাকো সার্জন সেই হিসেবে চোখের লেন্সের সার্জন। স্বাভাবিক অবস্থায় চোখের ভেতরের লেন্স স্বচ্ছ থাকে। এই লেন্সের অস্বচ্ছ অবস্থাকে ছানি বলা হয়। সে হিসেবে ছানির অস্ত্রোপচারের চিকিৎসক ‘ফ্যাকো সার্জন’ হিসেবে অভিহিত হতে পারেন।

ছানির অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। আলট্রাসাউন্ড পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ছানিটাকে গুলিয়ে বের করে আনার নাম ফ্যাকোইমালসিফিকেশন। যন্ত্রের মাধ্যমে ছানির অস্ত্রোপচারের এ পদ্ধতি যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁরা নিজেদের ‘ফ্যাকো সার্জন’ হিসেবে পরিচিত করেছেন; আর যন্ত্রটি ‘ফ্যাকো মেশিন’-এ রূপান্তরিত হয়েছে। এই যন্ত্রের বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বিভিন্নভাবে প্রচারের মাধ্যমে এ অস্ত্রোপচারকে সর্বাধুনিক পদ্ধতি আখ্যা দিয়ে আসছেন। প্রযুক্তিগত দিক থেকে ফ্যাকোইমালসিফিকিশেন যে আধুনিক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু একে যেভাবে উপস্থাপন করে মুনাফা অর্জনের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য নয়।

কেননা ছানির অস্ত্রোপচারের অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া ফ্যাকোইমালসিফিকেশনই একমাত্র সেলাইবিহীন অস্ত্রোপচার নয়, সেলাইবিহীন বিকল্প পদ্ধতিও রয়েছে। ভারতসহ অনেক দেশেই সেই পদ্ধতি ম্যানুয়াল ফ্যাকো নামে পরিচিতি। এ পদ্ধতি ওইসব দেশে ব্যবহার করে অসংখ্য রোগীর দৃষ্টি ফেরানো গেছে। আমাদের দেশেও এ পদ্ধতিতে ছানির অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো প্রচার নেই। ভারতের বিশ্বখ্যাত অরবিন্দ চক্ষু হাসপাতালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্যাকো সার্জারিতে প্রতি অস্ত্রোপচারে যন্ত্রপাতির ব্যয় এক হাজার ২০০ রুপি, সেখানে ম্যানুয়াল ফ্যাকোতে ব্যয় মাত্র ৪৬ রুপি।

এ পদ্ধতি কথিত ফ্যাকো সার্জারির মতো সেলাইবিহীন, দৃষ্টি-প্রদায়ক। এটি উন্নয়নশীল বিশ্বে ছানির চিকিৎসায় খুলে দিয়েছে নতুন দিগন্ত।
এ পদ্ধতি ফ্যাকো সার্জারির চেয়ে তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। ফ্যাকো সার্জারিতে যেসব জটিলতা হয়ে থাকে, ম্যানুয়াল ফ্যাকোতে তা ওই মাত্রায় হয় না। এ পদ্ধতিতে সরকারি হাসপাতালে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে সার্জারির পুরো ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব, যা ইনস্ট্রুমেন্টাল ফ্যাকো সার্জারিতে চিন্তাই করা যায় না।

বাংলাদেশে ম্যানুয়াল ফ্যাকো সার্জারি লাগসই প্রযুক্তি, যা দেশের লাখ লাখ ছানিজনিত অন্ধজনের চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ফ্যাকো সার্জারির জন্য জনপ্রতি যে ব্যয় হয়, তা দিয়ে ৩০ জন ছানি রোগীর চিকিৎসা এ পদ্ধতিতে সম্ভব।

অর্থাৎ একটি ফ্যাকো সার্জারির ব্যয় দিয়ে ৩০ জন পরিবারপ্রধানের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ৩০টি পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব। এই সাধারণ তথ্যটি মানুষের কাছে এত দিনে পৌঁছানোটা কি ঠিক হয়েছে?

শেষ কথা

শুরুতে উল্লিখিত রোগীর চোখে ম্যানুয়াল ফ্যাকো করা হয়েছে। শেষ পর্যêন্ত সরকারি হাসপাতালে সব মিলিয়ে এক হাজার টাকার অস্ত্রোপচার করিয়ে পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে ঘরে ফিরেছেন তিনি। এত অল্প টাকায় যে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব, তা কিছুদিন আগেও ছিল তাঁর ধারণার বাইরে। আসুন না, সবাই মিলে এ রকম অসংখ্য রোগীর দৃষ্টি ফেরানোর কাজে শামিল হই!

ডা• মো• শফিকুল ইসলাম
চক্ষু বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম আলো, ১২ মার্চ ২০০৮


শিশুদের অন্ধত্ব চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

সরকারি সেবা বাড়ানো প্রয়োজন
‘আমি কোনো পাপ করি নাই, আল্লাহ আমার কপালে লিখছে, তাই দুই ছেলেই অন্ধ হইয়া জ্ন নিছে।’ এভাবেই নিজের মনকে শান্ত রাখেন জুবাইদা নাসরিন। পাবনার ভেলুপাড়া গ্রামের নাসরিন জানান, তাঁর দুই ছেলেরই জ্ন হয়েছে জ্নগত ছানি নিয়ে। বড় ছেলের বয়স ১২ ও ছোট ছেলের তিন। বড় ছেলের চোখের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কাছে দৌড়াদৌড়ি করে লাভ হয়নি। শুধু নাসরিন নন, আরও হাজার হাজার মা সন্তানের অন্ধত্ব মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর আই হেলথ এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ২০০১-০৩ সালে করা একটি গবেষণার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার শিশু কোনো না কোনোভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং এদের প্রায় ১২ হাজার শিশু ছানিজনিত কারণে অন্ধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে অন্ধ হতো না এরা। আরও ১০ হাজার শিশু অন্ধ হতো না, যদি তাদের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতো। শিশুর দৃষ্টি বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে, জুবাইদা নাসরিনই এর প্রমাণ। তিনি বড় ছেলের বেলায় অবহেলা করলেও ছোট ছেলে রওনকের বেলায় ছিলেন অনেক বেশি সচেতন। রওনকের ছানির অস্ত্রোপচার হয়েছে ঢাকার শান্তিনগরে চাইল্ড সাইট ফাউন্ডেশন (সিএসএফ) ও ওয়াহিদা মতিন মেমোরিয়াল ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে ওয়াহিদা মতিন মেমোরিয়াল সিএসএফ চাইল্ড ভিশন সেন্টারে। রওনককে শনাক্তকরণ, অস্ত্রোপচার, ফলো-আপ, যাতায়াত, হাসপাতালে থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় ব্যয় বহন করছে সিএসএফ। ওই সহায়তার ফলেই নাসরিনের পক্ষে সম্ভব হয়েছে ছেলের চিকিৎসা করানোর। এ ভিশন সেন্টারে কথা হয় রিপন আহমেদের সঙ্গে। সাভারের ফুলবাড়িয়ার মোহাম্মদ আলী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিপন জ্ন থেকেই ছানির সমস্যায় আক্রান্ত ছিল।

শান্তিনগরের ভিশন সেন্টারে বিনামূল্যে রিপনের ডান চোখে অস্ত্রোপচার করে লেন্স সংযোজন করা হয়েছে। ডান চোখে এখন পুরোপুরি দেখতে পাচ্ছে। বাঁ চোখে আবছা দেখতে পায় সে। এখানে কর্তব্যরতরা জানান, রিপনের বাঁ চোখের অবস্থা আশাব্যঞ্জক নয়। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা এবং দেরি করায় এ চোখে অস্ত্রোপচারেও তেমন ভালো ফল পাওয়া যাবে না।

সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ ব্লাইন্ড মিশনের মাধ্যমে চাইল্ড সাইট ফাউন্ডেশনের সহায়তায় রিপনের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় অভিভাবক বুঝতেই পারেন না যে শিশুটি চোখের গুরুতর সমস্যায় আক্রান্ত। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাদানকারী চিকিৎসকেরাও অনেক সময় ছানিসহ চোখের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণে সময় অপচয় করেন। যখন অভিভাবকেরা সমস্যা অনুধাবন করেন, তখন শিশুকে নিয়ে কোথায় যাবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। চোখের আলো হারিয়ে একটি শিশু জীবনের তরে পরিবার ও সমাজের বোঝা হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সরকারি সেবা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে শিশুরা চোখের সেবা পাচ্ছে, যা দেশের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

দেশে বর্তমানে শিশু চক্ষুবিশেষজ্ঞের সংখ্যাও খুব কম-মাত্র নয় থেকে ১০। ২০০০ সালে সরকার আন্তর্জাতিক কর্মসূচি ‘ভিশন ২০২০’-এ অঙ্গীকার করেছে প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব নিরসনের।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিশু বিভাগের প্রধান ডা• জামাল নিজামুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের চোখের বিষয়ে মানুষ সচেতন হচ্ছে। সরকারি অবকাঠামোর ভেতরে শিশুদের চক্ষুসেবা দেওয়ায় সীমাবদ্ধতা আছে। তিনি দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুদের চক্ষু বিষয়ে একটি বিভাগ চালু করার ওপর গুরুত্ব দেন।

এ ক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে এসেছে বেসরকারি সংগঠনগুলো। অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহায়তায় পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল, খুলনা, দিনাজপুর, ময়নসিংহ ও মৌলভীবাজারে বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতিগুলোতে শিশুচক্ষু বিভাগ পরিচালিত হচ্ছে।

মানসুরা হোসাইন
প্রথম আলো, ২২ অক্টোবর ২০০৮


অলস চোখ থেকে শিশুর অন্ধত্ব

আমাদের চোখ কোনো জিনিসের ছবি তুলে স্মায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেয়। মস্তিষ্ক তখন বলে দেয় এটা কিসের বা কার ছবি বা এটির রং, আকৃতি কেমন। যদি এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে বুঝতে হবে, চোখে সমস্যা আছে। অলস চোখ বা এমব্লায়োওপিয়া চোখের একটি মারাত্মক রোগ, যা প্রধানত শিশুর চোখের ছবি গ্রহণের ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। ফলে শিশুটি ওই চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পায় না। যদি নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে শিশুটির দৃষ্টিশক্তি আর কখনোই ফিরে আসে না।

অলস চোখ কী
চোখের সবচেয়ে ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ আবরণটির নাম হচ্ছে রেটিনা। এটি আলোক সংবেদনশীল কিছু কোষ দিয়ে গঠিত। আমরা যা কিছুই দেখি না কেন, তার একটি ছবি রেটিনায় তৈরি হয়। রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলো শিশুর জ্নের পর চোখে আলো ঢুকে সেই আলোর উপস্থিতিতে পরিপূর্ণতা লাভ করতে থাকে। জ্নের পর যদি চোখে ঠিকমতো আলো না ঢোকে, তাহলে রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর বৃদ্ধি পরিপূর্ণভাবে হয় না। ফলে ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং কাজ না করার কারণে সেটি অলস চোখে পরিণত হয়।

কারণ
এ রোগের প্রধান ও একমাত্র কারণ হচ্ছে শিশুর চোখে ঠিকমতো আলো প্রবেশ করতে না পারা। আলো প্রবেশ না করার কারণ হলো-

-- জ্ন থেকে বা জ্নের পর শিশুর চোখে ছানি হলে। ছানির কারণে চোখের লেন্স ঘোলা হয়ে যায়, ফলে চোখে পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করে না। ফলে রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর বৃদ্ধি হয় না। যে চোখে ছানি আসে, শিশু তাকে কাজে লাগায় না, ফলে চোখটি অলস হয়ে যায়। দুই চোখে ছানি হলে দুটিই অলস হয়ে যায়।

-- জ্ন থেকে অথবা জ্নের পর চোখের আকৃতিগত পরিবর্তনের কারণে দৃষ্টিশক্তি কম থাকে। ফলে আলো ঢুকতে বাধা পায়। যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে ধীরে ধীরে চোখ অলস হতে থাকে।

-- টেরা চোখা মানুষ সব সময় দুটি চোখ দিয়ে একটি জিনিস দেখে, কিন্তু চোখ টেরা থাকলে শিশু ভালো চোখটি দিয়ে সব সময় দেখার চেষ্টা করে, টেরা চোখটি কাজে লাগায় না। ফলে টেরা চোখটি অলস হয়ে যায়।

--জ্নগতভাবে চোখের পাতা নিচের দিকে পড়ে গেলে চোখের যে স্বচ্ছ অংশ (কর্নিয়া) দিয়ে আলো প্রবেশ করে, তা যদি ঢেকে যায়, তাহলে পর্যাপ্ত আলো চোখে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে চোখের রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর বৃদ্ধি হয় না এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। যে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, শিশুরা সেটিকে ব্যবহার না করে সব সময় ভালো চোখটি ব্যবহার করে; ফলে অন্যটি অলস চোখে পরিণত হয়।

যেসব সমস্যা হয়
-- অলস লোকের যেমন কোনো কাজ থাকে না, তেমনি অলস চোখেরও কাজ থাকে না। অলস চোখের কারণে সৃষ্ট প্রধান সমস্যা হচ্ছে টেরা চোখ।

টেরা চোখঃ চোখ টেরা হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অলস চোখ। দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার ফলে যে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে, শিশু সেটি ব্যবহার করে না। ফলে সে চোখটি যেকোনো এক দিকে বেঁকে যায়। নির্দিষ্ট একটি বয়সসীমার মধ্যে চিকিৎসার মাধ্যমে অলস চোখটি সচল করে তুললে টেরা চোখ ভালো হয়ে যায়।

চিকিৎসা
-- যে কারণগুলোর জন্য চোখ অলস হয়, সেগুলোর চিকিৎসা করালে অলস চোখ ভালো করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে বয়স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাত বছরের কম বয়সী শিশুকে চিকিৎসা করালে সম্পূর্ণ সুস্থ হয় ওঠে।

-- জ্নগতভাবে যদি শিশুর চোখে ছানি থাকে, তাহলে দ্রুত ছানির অপারেশন করাতে হবে। বয়স সাত বছর পেরিয়ে গেলে অপারেশন করেও তেমন ফল পাওয়া যায় না। ধরা যাক, পাঁচ বছর বয়সের একটি শিশুর জ্নগত ছানি অপারেশন করে চোখে নতুন লেন্স লাগিয়ে দেওয়া হলো, তার পরও সে ভালো দেখছে না। এর কারণ হলো-তার চোখটি অলস হয়ে গেছে। তখন তার ভালো চোখটি কাপড় দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়। অলস চোখটিকে দিয়ে বেশি করে কাজ করানো হয়। বেশি কাজ করানোর জন্য চোখের রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলো আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

-- জ্নগতভাবে শিশুর দৃষ্টিশক্তি কম থাকলে খুব দ্রুত চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা ব্যবহার করতে হবে। যদি চশমা দিয়েও কাজ না হয়, তাহলে বিশেষ ধরনের চোখের ব্যায়াম (অ্যাকুলেশন থেরাপি) করে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। অর্থাৎ যে চোখটি ভালো আছে, তাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে অলস চোখটিকে দিয়ে কাজ করানো হয়। ফলে অলস চোখটি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

প্রতিরোধ
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে, শিশু কিছু বুঝে ওঠার আগেই অলস চোখ তার দৃষ্টিশক্তিকে চিরতরে নষ্ট করে দেয়। কারণ, অলস চোখের চিকিৎসা সাত বছরের নিচে থাকলেই করা সম্ভব। এ বয়সসীমার মধ্যে রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর বৃদ্ধি ঘটে। এ জন্য অভিভাবকের উচিত, শিশুকে স্কুলে পাঠানোর আগে একবারের জন্য হলেও চোখের ডাক্তার দেখানো; বিশেষ করে যেসব হাসপাতালে শিশুদের চোখ দেখার আলাদা ব্যবস্থা আছে।

ডা· শীতেস চন্দ্র ব্যানার্জী
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু চক্ষুরোগ বিভাগ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল, খুলনা
প্রথম আলো, ৪ জুন ২০০৮


নিকট দৃষ্টিতে ল্যাসিক

যার সারা জীবন চশমা লাগেনি তার চল্লিশের পর নিকটে দেখার চশমা লাগাটা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম। ইংরেজিতে বলে চৎবংনুড়ঢ়রধ আর বাংলায় চোখে ‘চালশে ধরা’। জন্ম থেকে চল্লিশ বছর (কারো ৩৭ কারও বা ৪৫, বাধা ধরা কোনো নিয়ম নেই) পর্যন্ত আমাদের চোখের ভেতরের লেসটা, যেটা সব দৃশ্যবস্তুকে ফোকাস করে পরিষ্কার দেখতে সাহায্য করে। এটা একটা অটো ফোকাস ক্যামেরার মতো কাজ করে এবং আকাশের প্লেন থেকে হাতের ঘড়ির কাঁটা পর্যন্ত নিমিষেই ফোকাস করতে পারে। তবে পার্থক্য এই যে ক্যামেরার লেস একটু আগে বা একটু পেছনে গিয়ে ফোকাস করে কিন্তু আমাদের চোখের লেসটা আগে পিছে না গিয়ে নিজেই আশপাশের কয়েকটা পেশির সাহায্যে মোটা-পাতলা হয়ে ফোকাস করতে সাহায্য করে। কিন্তু বয়সের সঙ্গে অন্যান্য সব অঙ্গের মতো লেসটাও একটু শক্ত হয়ে আসে এবং নিজে থেকেই মোটা-পাতলা হওয়ার শক্তি আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলে, যেজন্য চশমার পাওয়ার বাড়তে থাকে।

এ পর্যন্ত নিকট দৃষ্টির জন্য একমাত্র চশমাই ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। চশমা ছাড়া ভালো দেখার জন্য মাত্র গত ক’বছর পর্যন্ত এসেছে কন্ট্যাক্ট লেস ও সব শেষে ল্যাসিক। আর ল্যাসিক আসার পর মানুষ কন্ট্যাক্ট লেসের কথা বেশি বলছে না কারণ এ লেস খোলা পরার ঝামেলা ও প্রতিদিন পরিচর্যা করার সমস্যা অনেক। তাছাড়া নিকট দৃষ্টির জন্য কন্ট্যাক্ট লেস হয় না, অবশ্য অনেকে এক চোখে নিকটে দেখার জন্য কন্ট্যাক্ট লেস ব্যবহার করেন-যাকে বলে গড়হড়ারংরড়হ। এ প্রসঙ্গে পরে আসছি।

এবার আসা যাক ল্যাসিকের কথায়। নিকট দৃষ্টির জন্য ল্যাসিক কীভাবে সাহায্য করতে পারে। প্রথম কথা হলো চল্লিশের পর আমাদের চোখের পাওয়ার দুরে এবং কাছে এক নয়। প্রত্যেক দুরত্বের জন্য একেকটা আলাদা পাওয়ার, যেমন দুরের জন্য একটা কম্পিউটারে কাজ করার জন্য একটা (Mid-distance) ও নিকটের জন্য একটা। সাধারণ জীবনের জন্য এই তিনটাই যথেষ্ট। প্রথমে মনে রাখতে হবে ল্যাসিক (ও কন্ট্যাক্ট লেস) শুধু একটা পাওয়ার ঠিক করতে পারে। তাই প্রশ্ন হলো ল্যাসিক চালশে পড়া চোখে (Presbyopic) কীভাবে সাহায্য করতে পারে।

দুই চোখের পাওয়ার কম-বেশি Correction করিয়ে রোগীকে খুশি করা বর্তমানে খুবই একটা সাধারণ বিষয়। এই বয়সের দলে দুই শ্রেণীর মানুষ আছেঃ
(ক) দুরে চশমা লাগে না শুধু নিকটে লাগে
(খ) কারো দুরে ও নিকটে দুটোই লাগে।

এবার বলব এই দু’শ্রেণীর মানুষের জন্য দু’রকমের ব্যবস্হার কথা। সবশেষে জানবেন ক ও খ গ্রুপের কার জন্য কোনটা ভালো। এই দুই ধরনের চিকিৎসায়ই দুই চোখের পাওয়ার সম্পুর্ণ ঈড়ৎৎবপঃ না করে দুই দিকে কম-বেশি ঈড়ৎৎবপঃরড়হ করিয়ে দুরে কাছে নধষধহপব করিয়ে দেয়া। দেখা গেছে এতে চল্লিশোর্ধ মানুষরা অসম্ভব খুশি। এই দুই পদ্ধতি হলো

ক. মনোভিশন
এক কথায় এক চোখে দুরের জন্য আর অন্য চোখে কাছের জন্য ব্যবহার করা। এটা করালে দুরে এক চোখে খুব ভালো ও নিকটে অন্য চোখে খুব ভালো দেখা যায়। এই যে দুরে বা নিকটে এক চোখে দেখা সে দেখা দুই চোখ মিলে পরিষ্কার দেখার মতো এত আরামদায়ক যদিও নয় তবুও দেখা গেছে, যে সব সময় চশমা বয়ে নিয়ে বেড়ান থেকে মুক্তি, চশমাবিহীন ও ঝামেলাহীন সামাজিক জীবন বহু মানুষের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য। আপনি এই ধরনের চিকিৎসা করাবেন কিনা এটা সম্পুর্ণ নির্ভর করে আপনার নিজের চাহিদার ওপর, এখানে ডাক্তারের কোনো অভিমত নেই। তবে চোখের ব্যাপারে এটা খারাপও নয়। আর একটা কথা, দুই চোখে সমান দেখার জন্য আপনি একটা চশমা নিজের কাছে রেখেও দিতে পারেন, যদি বেশিক্ষণ লেখাপড়া বা চোখের কাজ করতে চান তাহলে মনোভিশনে চোখে একটু ক্লান্তি আসতে পারে। তখন দুই চোখে সমান দেখার জন্য চশমাটা সাময়িকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। মনোভিশন চশমাবিহীন সামাজিক জীবনের জন্য খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে যাদের দুরের চশমা এমনিতেই লাগে না।

খ. পাওয়ার কম-বেশি করান
এবার বলব বিশেষ করে তাদের কথা যাদের দুরে এবং কাছে দুটোতেই মোটামুটি পাওয়ার আছে। এরা নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে যে কোনো একটা পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে-
মনোভিশন অথবা দু’চোখেই দুরের জন্য পুরো পাওয়ার ঈড়ৎৎবপঃরড়হ করাতে পারেন এবং শুধু নিকটের জন্য চশমা (দু’চোখেই)। মনে রাখবেন, দুরের পাওয়ার ঠিক করালে নিকটের পাওয়ারও আগের থেকে কমে অর্ধেক হয়ে যাবে, দু’দিকেই লাভ। এতে সুবিধা হলো, সকালে উঠেই আর চশমা হাতড়াতে হবে না। দুরে দেখতে চশমা লাগবে না। নিকটেও মোটামুটি বড় লেখা পড়তে পারবেন যেটা আগে একেবারেই পারতেন না। তবে খুব ছোট লেখা পড়তে একটা চশমা পকেটে রাখতে হবে।

আসল কথা হলো ল্যাসিকের মাধ্যমে দুরের পাওয়ার সম্পুর্ণ সারিয়ে দেয়ার পরও আমরা এখন চোখের যে কোনো নিকটের পাওয়ারকে কম-বেশি করিয়ে রোগীকে খুশি করতে পারি।

চোখের পাওয়ার সম্বন্ধে নানান কথা খুলে বলার পরও সবচেয়ে ভালো ব্যবস্হা হলো ডাক্তারের চেম্বারের চেয়ারে বসে চোখের সেই সব পাওয়ার একের পর এক বসিয়ে ডাক্তার সাহেব যদি ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন যে অপারেশন করালে ঠিক কি হবে তাহলে আপনার জন্য ফবপরংরড়হ নেয়া সহজ হবে। তাই ল্যাসিক সেন্টারে গিয়ে এসব পাওয়ারের খুঁটিনাটি আলোচনা করা সবচেয়ে নিরাপদ।

সবশেষে মনে রাখবেন ল্যাসিক করিয়ে চল্লিশোর্ধ বয়সে যাদের দুরে ও নিকটে দু’রকমের পাওয়ার তাদেরও মোটামুটি চশমা থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব।

ডা. রশীদ হায়দার
আমার দেশ, ১লা এপ্রিল ২০০৮


কন্ট্যাক্ট লেন্স নিয়ে নানা কথা

প্রশ্নঃ কন্টাক্ট লেন্স কি চোখের জন্যে ক্ষতিকর?

উত্তরঃ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করে এবং নিয়ম মেনে চললে কন্টাক্ট লেন্স চোখের জন্য ক্ষতিকর নয়।

আমাদের দেশে অনেকেই আছেন উপযুক্ত পরীক্ষা না করেই চশমার দোকান থেকে কন্টাক্ট লেন্স নিয়ে ব্যবহার করেন এবং অনেক সময় নানা সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য আসেন। ধরা যাক একজন রোগীর চোখের পানির পরিমাণ কম। তাকে পরীক্ষা না করেই দোকান থেকে কন্টাক্ট লেন্স দেয়া হলো। ২/১ দিনের মধ্যেই ঐ রোগীর চোখে কর্নিয়ায় আলসার বা ক্ষত হয়ে যাবে এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে দৃষ্টির ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

আজকাল অনেক উচ্চ পানি ধারণক্ষমতাসহ কন্টাক্ট লেন্স পাওয়া যায়, যা চোখের জন্য আরামদায়ক। এছাড়া কিছু ডিসপোজঅ্যাবল কন্টাক্ট লেন্স আছে যা মাত্র ১-২ মাস ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। যার ফলে চোখের কোন জটিলতা হয় না বললেই চলে।

প্রশ্নঃ কন্টাক্ট লেন্স একবারে কতদিন চোখে রাখা যায়?

উত্তরঃ সাধারণ কন্টাক্ট লেন্সগুলো দিনের বেলা চোখে পরা হয় এবং রাত্রে ঘুমের পূর্বে নির্দিষ্ট কেসের মধ্যে খুলে রাখা হয়। লেন্সের প্রকারভেদে ১২-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত এই লেন্স পরে থাকা যায়।

এক্সটেন্ডেড ওয়ার কন্টাক্ট লেন্স (ঋর্সণভঢণঢ ষণটর ডমর্ভটর্ড ফণভ্র) নামে এক ধরনের কন্টাক্ট লেন্স পাওয়া যায়- যাতে পানি ধারণক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। এসব কন্টাক্ট লেন্স একবার চোখে লাগিয়ে ৭-১৪ দিন পর্যন্ত রাখা যায়। এর বেশি রাখলে চোখের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে।

১-২ সপ্তাহ পর ঐ লেন্সগুলো ফেলে দিতে হয় বলে বছরে অনেক সংখ্যক কন্টাক্ট লেন্সের প্রয়োজন হয় এবং লেন্সের মূল্যও অনেক বেড়ে যায়। আমাদের দেশে এই জাতীয় লেন্সের ব্যবহার অনেকটা সীমিত।

চোখের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করলে ডেইলি ওয়ার লেন্স বা দৈনিক রাত্রে খুলে রাখার লেন্সই ভালো।

প্রশ্নঃ রঙিন কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে চোখে কোন অসুবিধা হয় কি?

উত্তরঃ সাধারণ কন্টাক্ট লেন্সের উপরে এক ধরনের রং করে রঙিন কন্টাক্ট লেন্স তৈরী করা হয়ে থাকে। যেহেতু রং একটি কেমিক্যাল, এজন্য অনেকের চোখে ঐ রং-এর জন্য এলার্জি বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

যারা সৌন্দর্য বাড়াবার জন্য রঙিন কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চান তাদের জন্য প্রথম কয়েকদিন ট্রায়াল হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোন সমস্যা না হলে তখন ঐ ব্রান্ডের কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে।

যাদের চোখে পাওয়ার আছে তাদের জন্য প্রথমে সাধারণ কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে- ২য় ধাপে রঙিন+পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রশ্নঃ অল্প আলোতে পড়লে কি চোখের ক্ষতি হয়?

উত্তরঃ অল্প আলোতে পড়লে চোখের কোন ক্ষতি হয় না। তবে কোনকিছু দেখা না গেলে, জোর করে পড়ার চেষ্টা করলে চোখের উপর চাপ পড়ে বা আইস্ট্রেন হয়। কিছুক্ষণ এভাবে পড়লে মাথাব্যথা বা চোখে ব্যথা হতে পারে। সুযোগ থাকলে স্বাভাবিক আলোতে পড়াশুনা করাই শ্রেয়।

প্রশ্নঃ আমার চোখে চশমা লাগলে কি আমার বাচ্চাদেরও লাগবে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই লাগতে পারে। বিশেষ করে আপনার যদি নিকট দৃষ্টি বা মায়োপিয়া থাকে তাহলে আপনার ছেলে-মেয়ে কারও কারও ঐ একই সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি এমন কাউকে বিয়ে করেন যার আপনার মতই চশমা লাগে কিংবা আপনার বংশের কাউকে বিয়ে করেন তাহলে আপনাদের ছেলে-মেয়েদের চশমা লাগার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে।

ডাঃ এম নজরুল ইসলাম,
চক্ষু বিশেষজ্ঞ, বারডেম।
দৈনিক ইত্তেফাক, ০৩ মে ২০০৮

খুশকি ও চুল পড়া

খুশকি ও চুল পড়া

খুশকির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘ডেনড্রাফ’। এটি সাদা সাদা শিথিল ও মসৃণ শুকনো মৃত চামড়ার আঁশ, যা দ্রুত সমস্ত মাথার ত্বককে আক্রান্ত করে ফেলে। এ অবস্থা যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখন আঁশগুলো সাদা-হলুদে মিশে আঠালো হয়ে ওঠে। পরিণতিতে সৃষ্টি হয় টাক।

কারণঃ প্রধান কারণগুলো হল- * অজানা * বংশগত ষ ফিজিওলজিক্যাল * সাইকোলজিক্যাল * দুশ্চিন্তা, টেনশন ও অবসাদ * জীবাণুঘটিত- পিটাইরোস্পোরাম ও ভাল * বিশেষ ওষুধ সেবনে সৃষ্ট * হরমোনাল- কিছু বিশেষ হরমোন দায়ী * ঋতুজনিত আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা * পুষ্টি সমস্যা * ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ইত্যাদি।

চিকিৎসাঃ অনেক চিকিৎসা আছে। তবে সঠিক কারণ শনাক্ত করে চিকিৎসা দেয়াই হল সফল চিকিৎসার মূল ভিত্তি। অত্যাধুনিক কসমো-থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যকরী। চিকিৎসাটির মাধ্যমে চুল ফাটা ও চুলের রুক্ষতা নির্মূল করা সম্ভব।

**************************
ডাঃ একেএম মাহমুদুল হক (খায়ের)
ত্বক, যৌন, সে ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ এবং কসমেটিক সার্জন, কনসালটেন্ট, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ফোন- ৯৩৩৮৯১১।
দৈনিক যুগান্তর, ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯।


খুশকি চিকিৎসা ও প্রতিকার করবেন কিভাবে

খুশকি একটি অতি পরিচিত চর্মরোগ যা মাথার খুলির ত্বকে হয়। প্রত্যেক মানুষই জীবনের কোন না কোন সময় খুশকিতে আক্রান্ত হয়। যার ফলে অনেকেই এই রোগটিকে খুব হালকাভাবে নেয়, এমনকি এটি যে একটি রোগ এবং এর যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন সে সম্বন্ধে সচেতনতার বড্ড অভাব রয়েছে।

তিনটি কারণে মাথায় খুশকি হয়ে থাকেঃ
-মাথার খুলির ত্বকে জীবাণুর সংক্রমণ বেশি হলে, বিশেষভাবে ম্যালাসেজিয়া বা পিটাইরেসিস গ্রম্নপের ইস্টের পরিমাণ বেড়ে গেলে।
-তেল গ্রন্থি (সেবাসিয়াস গ্রন্থি) থেকে ত্বকের তৈলাক্ত উপাদান বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হলে।
-অনেকে জেনেটিক সূত্রে খুশকির ঝুঁকিতে থাকেন।
খুশকি হলে এর প্রভাবে মাথায় প্রচণ্ড চুলকানি ছাড়াও নিয়মিত চুল পড়তে পারে। এমতাবস্থায় আমরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সাধারণ শ্যাম্পু কিংবা তেল ব্যবহার করি কিংবা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছুই করি না। যার ফলে বিভিন্ন প্রকার সেকেন্ডারী ব্যাকটেরিয়াল কিংবা ফাংগাল ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যার ভেতর সেবোরিক ডার্মাটাইটিস এবং টিনিয়া ক্যাপাইটিস অন্যতম।

এ সকল সমস্যার সাথে নিত্যদিনের সঙ্গী হিসাবে রয়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া। সাদা সাদা খুশকি যখন মাথা থেকে ঝরে ঘাড়ের কাপড়ে জমে, তখন প্রত্যেকেই এক ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। দৈনন্দিন মেলামেশা, অফিস-আদালতে কাজকর্ম, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান এমনকি প্রিয়জনের সাথে দেখা করা, সবক্ষেত্রেই এই বিব্রতকর খুশকি দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

আজকাল বেশিরভাগ লোকই বিভিন্ন প্রকার শ্যাম্পু ব্যবহার করেন। চুল পরিষ্কার রাখতে এবং চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে শ্যাম্পু ব্যবহারে এখন যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। এই সচেতনতার বেশিরভাগই কসমেটিক কোম্পানীগুলোর বিজ্ঞাপনের অবদান। মনে রাখতে হবে খুশকি একটি রোগ যা নির্দিষ্ট কিছু কারণে হয়ে থাকে। তাই একটি রোগের চিকিৎসা করতে যেমন ওষুধের প্রয়োজন হয় তেমনি খুশকি দূর করতেও যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার যে, যদি খুশকির যথাযথ চিকিৎসা না করানো হয় তবে ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি হবে এবং সেই জটিলতারও আবার অন্য ধরনের ওষুধের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। কাজেই আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এর যথাযথ চিকিৎসা করানোর ব্যাপারে।

আমেরিকার খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) খুশকি দূরীকরণে একটি শ্যাম্পুকে কার্যকর বলে ছাড়পত্র দিয়েছে। এটি হচ্ছে কিটোকোনাজল ২% শ্যাম্পু। এই শ্যাম্পুটি ম্যালাসেজিয়া বা পিটাইরেসিস গ্রম্নপের ইস্টের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়াও এটি তেল গ্রন্থি (সেবাসিয়াস গ্রন্থি) থেকে ত্বকের তৈলাক্ত উপাদান নিঃসরণ কমায়। ফলে খুশকি দূর হয়, মাথার ত্বকে চুলকানি কমে, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পায়। অনেক বছর ধরে এই কিটোকোনাজল ২% শ্যাম্পু পৃথিবীর সর্বাধিক এন্টি-ডেনড্রাফ শ্যাম্পু প্রেসক্রিপশন হচ্ছে যা বাংলাদেশেও অনেকদিন ধরে ড্যানসেল শ্যাম্পু নামে বাজারজাত হয়ে আসছে।

খুশকি দূর করতে আরো কিছু মেডিকেটেড শ্যাম্পু পাওয়া যায়। জিংক পাইরিথিয়ন কিংবা সেলেনিয়াম সালফাইড সমৃদ্ধ এ সমস্ত শ্যাম্পু আসলে কসমেটিক উপাদান এবং খুশকি দূরীকরণে তেমন একটা কার্যকর নয়। এছাড়া এ সমস্ত শ্যাম্পু এফডিএ কর্তৃক স্বীকৃতও নয়।

খুশকি দূরীকরণে চুল ধুয়ে তাতে কিটোকোনাজল ২% শ্যাম্পু বা ড্যানসেল ভালভাবে লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ২ বার করে ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহারে খুশকি কমে যাবে। যাদের নিয়মিত খুশকি হয় তারা ১ বা ২ সপ্তাহ পর পর প্রতিরোধক হিসেবে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, এতে তারা খুশকিমুক্ত থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন। ড্যানসেল শ্যাম্পু বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে কার্যকর এবং নিরাপদ।

ডাঃ নাসরীন জাহান, লেজার ও কসমেটোলজিস্ট,
বাংলাদেশ লেজার স্কিন সেন্টার, বাড়ী নং ৩৯, রোড-২ (আম্বলা কমপ্লেক্স),ধানমন্ডি, ঢাকা।
দৈনিক ইত্তেফাক, ০৭ মার্চ ২০০৯।


অল্প বয়সে চুল পড়াঃ
চুল ত্বকেরই অঙ্গ। ত্বকের উপরিতলের কোষ বা এপিডারমাল সেল থেকে চুলের উৎপত্তি। হেয়ার ফলিকল তৈরি হয় এপিডারমাল সেল থেকে। হেয়ার ফলিকনের একেবারে গভীরতম অংশ বা হেয়ার বালবের বিভাজনে তৈরি হয় নতুন নতুন কোষ। এই নবীন কোষগুলোতে বিশেষ ধরনের প্রোটিন জমতে থাকে, যা ত্বকের সাধারণ প্রোটিন থেকে কিছুটা আলাদা ও শক্ত। হেয়ার বালবের মধ্যের মেলানোসাইট চুলের রঙ সরবরাহ করে। চুলের পুষ্টি আসে হেয়ার বালবের শিরা, উপশিরা থেকে। হেয়ার বালবের থেকে তৈরি হওয়া কোষগুলো একত্রে একটি দন্তের মতো উপরিতলের দিকে বাড়তে থাকে। জীবন্ত কোষগুলো ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগোয়, জমে ওঠা শক্ত কেরাটিনের একটি টালিতে পরিণত হয়। চুলের এই দন্ডের চারপাশে হেয়ার ফলিকদের দেয়াল লেপটে থাকে। ত্বকের উপরিভাগের কাছে এসে হেয়ার শ্যাফট তার চারপাশের দেয়াল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি মোটা কালো সুতার মতো ত্বকের উপভিাগ থেকে বেরিয়ে আসে। তাই চুলের পুষ্টি সঞ্চালন করতে হলে হেয়ার ফলিকলের নিচে, ত্বকের গভীরে হেয়ার বালবে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে হবে এবং সেই রক্তে চুল তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপাদান ঠিকভাবে থাকতে হবে। আগাগোড়া হেয়ার ফলিকল বা চুল তৈরির কারখানাটিও ঠিক থাকা দরকার।

ত্বকের গভীরে যেখানে হেয়ার বালবের কোষগুলো রয়েছে সেখান থেকে ক্রমাগত নতুন কোষও সৃষ্টি হয়ে চুলের দন্ডের দোড়ার দিকে যুক্ত হচ্ছে এবং দন্ডটিকে ক্রমাগত উপর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জীবন্ত কোষগুলো উপরের দিকে ওঠার সময় কেরাটিন সঞ্চয় করছে, শক্ত হচ্ছে, মৃতকোষে পরিণত হচ্ছে। এই মৃত কোষের সমষ্টিই চুল হিসেবে ত্বকের উপরিভাগে ক্রমাগত এগিয়ে এসে অবশেষে ত্বকের বাইরে চুল হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

অল্প বয়সে টাক পড়া

অল্প বয়সে টাক পড়ার নানা কারণ রয়েছে। পুরুষদের জন্য এন্ড্রোজেনিক এলোপিসিয়া শুরু হয় কপালের দু’পাশে রগের কাছে। তারপর ক্রমশ বাড়তে বাড়তে সামনে ও চাঁদিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই মেল সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরন ও জেনেটিক প্রভাবের কারণে হয়। চুলের বৃদ্ধি অনেকাংশে টেস্টোস্টেরনের ওপর নির্ভরশীল। চুলের গোড়ায় কিছু রিসেপ্টর থাকে যেগুলো এই হরমোনোর উপস্থিতিতে চুলের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে একই মাত্রায় হরমোন থাকা সত্ত্বেও চুলের তারতম্য হয়। এ জন্যই পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে সামনের চুল ঝরে যেতে থাকে। অবশ্য চুল পড়ার জন্য থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ, রক্তস্বল্পতা, ডিম্বাশয়ের অসুখ বা অন্য কোনো এন্ডোক্রাইন অসুখও হতে পারে। বর্তমানে চুল পড়া বা টাকের আধুনিক চিকিৎসা এসেছে। বাজারে প্রচলিত শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনে মোহিত না হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।

রূপচর্চার নামে নানা অপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহারে ত্বক ও চুলের ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ, বিভিন্ন কেমিক্যাল ক্ষার ও ইনসেকটিসাইড ব্যবহার, পানি দূষণ, বায়ুদূষণ ইত্যাদিও পরোক্ষভাবে চুল পড়ার জন্য দায়ী। আধুনিক জীবনযাত্রা স্বাভাবিক সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য আশার কথা এই যে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর প্রতিকার আছে।

ডাঃ ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতাল (প্রাঃ) লিঃ, ১০৩, এলিফ্যান্ট রোড (তৃতীয় তলা), বাটা সিগন্যালের পশ্চিম দিকে, ঢাকা
দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ এপ্রিল ২০০৯।


সুন্দর চুলের জন্য
চুল নিয়ে আজকাল অনেকেরই ভাবনার অন্ত নেই। ভালো স্বাস্থ্য, সুন্দর চুল সবারই কাম্য। গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সমান ভারী চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল বলা যায়। এ ছাড়া চকচকে কালো চুল এবং মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকতে হবে।

স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য। সঠিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে প্রচুর শাকসবজি, ফল ও সালাদ। খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের অভাবে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়, চুল ঝরে পড়ে।

সঠিক পরিমাণে পানি পান করলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বেরিয়ে যায়।
নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।

মাথার ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার রাখাও প্রয়োজন।

প্রোটিন এবং আপনার চুল
প্রোটিনের অভাবে চুলের রঙ প্রথমে নষ্ট হয়ে যায়। চুল লালচে বাদামি হতে থাকে। পরে চুল ঝরে যায় এবং চুলের আগা ফাটতে থাকে। কেরাটিনের অভাবে চুল ফেটে যায়। খাদ্য তালিকায় মাছ, গোশত, ডিম, দুধ, ডাল, দই ও পনির ইত্যাদি থাকা জরুরি এবং কেরাটিন তৈরিতে সহায়তা করে।

ভিটামিন এবং আপনার চুল
ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে চুল রুক্ষ ও প্রাণহীন হয়ে ওঠে। আবার অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’-এর জন্য চুল ঝরে পড়তে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’-এর জন্য অল্প অল্প করে চুল জায়গায় জায়গায় ওঠে গিয়ে টাক পড়ে যায়। খাদ্য তালিকায় দুধ, গাজর, মুলা, সবুজ শাকসবজি থাকা প্রয়োজন। ভিটামিন ‘সি’র অভাবে চুল খসখসে শুষ্ক হয়ে ওঠে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তাই লেবুজাতীয় ফল, কমলালেবু, কেনু, মুসাম্বি ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন।

ভিটামিন ‘বি’ চুলকে চকচকে ও ঘন করে তোলে। শস্যদানা, দুধ, ডিম, কলা, বাদাম, কলিজা ও ডালে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’। প্রতিদিন ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খেলে চুল ভালো হবে এবং চুল ঝরবে না।

স্নেহপদার্থ এবং আপনার চুল
চুল তৈলাক্ত হলে প্রাণীজ চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করুন। উদ্ভিজ্জ তেল খেতে পারেন। চর্বিসমৃদ্ধ, গরু ও খাসির গোশত কম খাবেন। স্কিমড দুধ বা ননী তোলা দুধ, পনির ও দই খেতে পারেন।

স্বাস্থ্যহীন চুলের কারণ
সুষম খাবার না খাওয়া স্বাস্থ্যহীন চুলের প্রধান কারণ,খাদ্য তালিকা সঠিক না হওয়ার কারণে চুল ঝরে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খাওয়া ও ভিটামিন গ্রহণ করা প্রয়োজন।
দীর্ঘ সময় হেলমেট, টুপি ইত্যাদি পড়ে থাকা।
চুলে নানা কেমিক্যাল ডাই ব্যবহার করা।
সঠিকভাবে চুল পরিষ্কার না করা।
খুশকি ও অন্যান্য রোগ।
অতিরিক্ত রোদে বের হওয়া এবং চুল ভেজা থাকা।
শারীরিক অসুখ-বিসুখ, মানসিক চাপ।
ঘুম না হওয়া এবং হরমোনের তারতম্যজনিত কারণ।

চুল স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়লে এবং চুল ঝরে পড়লে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। সুষম আহার, চুলের সঠিক পরিচর্যা এবং প্রয়োজনে কিছু ওষুধের ব্যবহারে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।

ডাঃ ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতাল (প্রা.) লিঃ, ১০৩, এলিফ্যান্ট রোড (তৃতীয় তলা), বাটা সিগন্যালের পশ্চিম দিকে, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দগিন্ত, ২৬ এপ্রিল ২০০৯।


চুলপড়া নিয়ে কিছু কথা
বিভিন্ন বয়সের নারী ও পুরুষ বর্তমানে চুল পড়ার সমস্যায় আক্রান্ত। টিনএজার থেকে মধ্যবয়সী অনেকেরই চুল ঝরে যাচ্ছে। ছেলেদের মাথার সামনের দিকে চুল ফাঁকা হয়ে টাক দেখা দিচ্ছে। মেয়েদের বেণী চিকন হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু বর্তমানে অনেকেরই চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে, তাই নানা রকম বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে মিডিয়াগুলোতে। এসব পণ্য বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং কেউ উপকৃত হয়েছেন বলে জানা যায়নি। ঠিক একই অভিযোগ রয়েছে রঙ ফর্সাকারী ক্রিমের প্রচারের ব্যাপারে। চুল পড়তে থাকলে এর কারণ নির্ণয় ও প্রতিকার করা প্রয়োজন। বর্তমানে চুল পড়ার চিকিৎসা অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে প্রথমে চুল পড়ার কারণ নির্ণয় করা প্রয়োজন। চুল পড়ার নানা কারণের মধ্যে রয়েছে খুশকি ও মাথায় ত্বকের নানা সংক্রমণ ও প্রদাহ, অতিরিক্ত ধূলা-ময়লার কাজ করা, চুল সঠিকভাবে পরিষ্কার না রাখা, হরমোনের তারতম্য, সঠিকভাবে চুলের পরিচর্যা না করা, সুষম খাদ্য গ্রহণ না করা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, সময় মতো ও পর্যাপ্ত না ঘুমানো এবং নানা কেমিক্যালের ব্যবহার। যেমন জেল, স্প্রে, চুল সোজা বা কোঁকড়ানোর জন্য হিট দেয়া, রঙ করা ও বংশগত।

চুল পড়ার কারণ নির্ণয়ের রোগীর ইতিহাস পর্যালোচনা করে নানা রকম পরীক্ষা ও হেয়ার অ্যানালাইসিস করা হয়। কারণ অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চুল পড়ার কারণ প্রতিকার করতে পারলেই চুল পড়া বন্ধ হয়। এখানে সঠিক তেল ও শ্যাম্পুর ভূমিকাও অনেক। চুলপড়া বন্ধ হওয়ার পরে নতুন চুল গড়ানোর জন্য চিকিৎসা দেয়া দরকার। এক্ষেত্রে মিনক্সিডিল বা প্রয়োজন মতো ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে।

ছেলেদের চুল পড়া বা টাকের ব্যাপারে বলতে গেলে একটা কথা না বললেই নয়, বর্তমানে অল্প বয়সী যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে তাদের সঠিক চিকিৎসার অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ তাতে টাক পড়া রোধ করা সম্ভব হবে। মানসিক চাপ কমালে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব ও নতুন চুল গজাতে সহায়তা করা যায়। তাই অল্প বয়সীরা সতর্ক হোন ও চিকিৎসা নিন।


ডাঃ ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতাল (প্রাঃ) লিঃ, ১০৩, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৮ এপ্রিল ২০০৯।


পুরুষের চুল পড়া
চুল পড়া একটি স্পর্শকাতর সমস্যা। ছেলেদের চুল পড়ে যাওয়া বা টাক সমস্যা নিয়ে অনেকেই বিব্রত বা বিরক্ত। চুল পড়ার কারণ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে বা হচ্ছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে বলা হয়, চুল পড়ার কারণ বংশগত বা হরমোনজনিত। ছেলেদের চুল পড়া বা এনড্রোজেনিক এলোপিসিয়ার মূল কারণ ডাইহাইড্রোক্সি টেসস্টোসস্টেরন বা ডিএইচটি। ডিএইচটি একটি পুরুষ হরমোন। পুরুষ হরমোন টেসস্টোসস্টেরন থেকে ৫ আলফারিজাকটেজ এনজাইমের সাহায্যে তৈরি হয় ডিএইচটি। ডিএইচটি চুলের ফলিকলের গোড়ায় গিয়ে এদের বৃদ্ধি রোধ করে এবং রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয়। এভাবেই চুল পড়তে শুরু করে। সুতরাং ডিএইচটি বেড়ে গেলে চুল পড়তে শুরু করে এবং একপর্যায়ে টাকের সৃষ্টি হয়।

চুল বৃদ্ধি বা গজানোর জন্য একটি চক্র বা চুলের জীবন চক্র রয়েছে। এই চক্রের তিনটি পর্যায় রয়েছে। বৃদ্ধির সময়কে বলে এনাজেন। এনাজেন ২ থেকে ৬ বছর স্থায়ী হয়। মাথার ৯০ শতাংশ চুল এনাজেন বা বৃদ্ধি হতে থাকে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্যাটাজেন। এটি একটি অস্থায়ী পর্যায়। এটি কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সর্বশেষ পর্যায় টেলোজেন। টেলোজেন ২ থেকে ৪ মাস স্থায়ী হয়। এ সময় কিছু চুল পড়ে যায় এবং ওই সব ফসিকল থেকে নতুন চুল গজায়। টেলোজেন পর্যায় দীর্ঘতর হলে চুল বেশি পড়ে যায়। এ ছাড়া চুলের ফসিকল শুকিয়ে গেলে নতুন চুল নাও গজাতে পারে। ডিএইচটিকে বাধা দেয় এমন ওষুধ ব্যবহারে চুল পড়া রোধ করা যেতে পারে। শরীরের ডিএইচটি’র মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হলে চুল পড়া কমবে। বর্তমানে এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারে চুল পড়ার চিকিৎসা চলছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।


ডাঃ ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতাল (প্রাঃ) লিঃ, ১০৩, এলিফ্যান্ট রোড (তৃতীয় তলা), বাটা সিগন্যালের পশ্চিম দিকে, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৯ এপ্রিল ২০০৯।


সুন্দর একমাথা চুল
সুন্দর একমাথা চুল সবারই কাম্য। কিন্তু নানা কারণে বর্তমানে অনেকেরই চুল ঝরে যাচ্ছে। অনেক সময় রোগী এসে জিজ্ঞেস করেন কী কারণে চুল পড়ে। আসলে এক কথায় এর জবাব হয় না। আবার একেকজনের একেক কারণে চুল ঝরে। সাধারণত হরমোনের তারতম্য, রক্তস্বল্পতা, যেকোনো অসুখের পর ও প্রসবের পরে। মানসিক চাপ ও অন্যান্য ওষুধের কারণে চুল পড়তে পারে।

বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রা ও কর্মব্যস্ততাও স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। আর এ থেকে চুল ঝরতে পারে। অনেকে বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন। অতিরিক্ত ধূমপান এসবও চুল পড়ার কারণ হতে পারে। খাদ্যাভাস একটি বড় ব্যাপার। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, চা, কফি ও ফাস্ট ফুড, কার্বনেটেড ড্রিঙ্কস খাওয়ার মাত্রা বর্তমানে বেড়ে গেছে। শাকসবজি, ফল ইত্যাদি সহকারে সুষম খাদ্য গ্রহণে আগ্রহী নন। প্রতি বেলায় অন্তত একটি ফল বা সবজি খান এমন লোক খুঁজে যাওয়া কঠিন। অথচ শাকসবজি ও ফল নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন। এবার আসা যাক পানির কথায়। প্রতিদিন ১৬-২০ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমরা সচেতন নই।

চুলের সঠিক যত্ন সম্পর্কে না জানার কারণেও অনেকের চুল পড়ে। চুল পরিষ্কার রাখা একটি অপরিহার্য ব্যাপার। অথচ অনেকে বলেন, শ্যাম্পু করলে বেশি পড়ে। আসলে সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার না করলে এটি হতে পারে। এ ছাড়া চুল অতিরিক্ত ময়লা হলে, তা পরিষ্কার করতে গেলে চুল পড়বেই। চুলের জন্য সঠিক শ্যাম্পু নির্ধারণ করা জরুরি ব্যাপার। শহরের পরিবেশ দূষণের কারণে প্রয়োজন অনুযায়ী সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন শ্যাম্পু করা প্রয়োজন।

অনেকে চুল খুব ঘন ঘন আঁচড়ান। এটা ঠিক নয়। আবার চুল না আঁচড়ানোও ঠিক নয়। আর আঁচড়ানোর সময় প্রতিদিন গড়ে ১০০টি পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক বলে ধরে নিতে হবে। চুল খুব টেনে বাঁধাও চুলের জন্য ক্ষতিকর। আবার বর্তমানে নানারকম ক্ষতিকর কেমিক্যাল, রঙ ও হিট দিয়ে চুলের নানা স্টাইল করা হয়। জেল, মুজ, হেয়ার ডাই­ এসব চুলের ক্ষতি করে। এ ছাড়া হিটে চুল নষ্ট হয়ে যায়। তাই কোনো ফ্যাশনের পেছনে ছুটে চুলের ক্ষতি করার আগে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে চুলের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। তবে অল্প রকমে খুব বেশি চুল পড়তে থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। চুল পড়তে থাকলে সতর্ক হোন। কারণ খুব বেশি চুল পড়ে মাথা ফাঁকা হয়ে গেলে চিকিৎসা করার সময়, ধৈর্য ও ব্যয়সাপেক্ষ। তবে আশার কথা হলো বর্তমানে যেসব ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হচ্ছে তার ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। মুখে খাওয়ার ও মাথার ত্বকে ব্যবহার করার নানা ওষুধ প্রয়োগে বর্তমানে চুল পড়ার চিকিৎসা করা হচ্ছে।


ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতাল (প্রা.) লি., ১০৩, এলিফ্যান্ট রোড (তৃতীয় তলা), বাটা সিগন্যালের পশ্চিম দিকে, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৯ অক্টোবর ২০০৮



চুল পড়ার কারণ ও প্রতিরোধ
ত্বকের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত চুলের যত্ম নেয়া জরুরি। দৈনিক কিছু চুল স্বাভাবিকভাবে পড়ে যায় এবং একইভাবে কিছু চুল গজায়। কিন্তু চুল পড়া ও চুল গজানোর হারের সমতা যখন থাকে না তখনই চুল পাতলা হতে শুরু করে। দিনে ১০০টা চুল পড়লে তা স্বাভাবিক। অনেক রকম ইনফেকশন, বিভিন্ন রোগ, ওষুধের ব্যবহার এবং খাদ্যের ভিন্নতার কারণে সাধারণত চুল পড়ে। তবে ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ জিনগত বা বংশগত। এ অবস্হাকে বলা হয় অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া এবং অ্যানড্রোজেন অর্থাৎ পুরুষ হরমোন এ সমস্যার জন্য দায়ী।

চুল পড়ার জন্য ডিএইচটি হরমোন দায়ী। পুরুষদের চুল সামনের দিকে পড়ে টাকে পরিণত হয় এবং মহিলাদের পুরো মাথার চুলই এককভাবে পড়ে এবং পাতলা হয়ে যায়। চুল পড়ার রাসায়নিক কারণ খুবই জটিল।

চুল পড়ার অন্যান্য কারণ
-- ইনফেকশনজনিত যেমন-ব্যাকটেরিয়াঃ পায়োজেনিক, টিউবারকুলসিস; ফ্যাঙ্গাসঃ কেরিওন ভাইরাসঃ হারপিস ইনফেকশন; প্রোটোজোয়ারঃ লিশমেনিয়া।
-- শারীরিক ইনজুরিঃ কেমিক্যাল, পুড়ে যাওয়া।
-- মাথার ত্বকের রোগ যেমন-লুপার ইরায়থমেটাস লাইকেন প্লানাস।
-- এছাড়া যেসব পরিবার অ্যাজমা, থাইরয়েড রোগ, শ্বেতী, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্যারনেসিয়াস অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত সেসব পরিবারের লোকজনের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে।
-- বিভিন্ন রকম ওষুধ যেমন প্রেসারের ওষুধ, ক্যানসারের ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ইত্যাদি।
-- মানসিক দুশ্চিন্তা।

নানা উপায়ে চুল পড়া রোধ করা যায়, যেমন-
চুলের যত্মঃ প্রতি একদিন অন্তর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলা দরকার। ঘন ঘন শ্যাম্পু করার ফলে চুলের গোড়ায় জমে থাকা সাবান ও তৈলাক্ত পদার্থ থাকে, যাতে ডিএইচটি থাকে। এই ডিএইচটি চুল ঝরে পড়াকে ত্বরান্বিত করে থাকে। চুলের স্বাস্হ্যের সঙ্গে শরীর ও মনের স্বাস্হ্যও অনেকাংশে জড়িত। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণমত শাকসবজি ও ফল যথেষ্ট পরিমাণে খেতে হয় অর্থাৎ ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া অতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল চুল পড়ার কারণ হতে পারে।

এছাড়া যে সব ওষুধ গ্রহণের ফলে চুল ঝরে যেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

ডা: মোহাম্মদ শওকত হায়দার
আমার দেশ, ১৮ নভেম্বর ২০০৮।


ত্বকের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত চুলের যত্ম নেয়া জরুরি। দৈনিক কিছু চুল স্বাভাবিকভাবে পড়ে যায় এবং একইভাবে কিছু চুল গজায়। কিন্তু চুল পড়া ও চুল গজানোর হারের সমতা যখন থাকে না তখনই চুল পাতলা হতে শুরু করে। দিনে ১০০টা চুল পড়লে তা স্বাভাবিক। অনেক রকম ইনফেকশন, বিভিন্ন রোগ, ওষুধের ব্যবহার এবং খাদ্যের ভিন্নতার কারণে সাধারণত চুল পড়ে। তবে ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ জিনগত বা বংশগত। এ অবস্হাকে বলা হয় অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া এবং অ্যানড্রোজেন অর্থাৎ পুরুষ হরমোন এ সমস্যার জন্য দায়ী।

চুল পড়ার জন্য ডিএইচটি হরমোন দায়ী। পুরুষদের চুল সামনের দিকে পড়ে টাকে পরিণত হয় এবং মহিলাদের পুরো মাথার চুলই এককভাবে পড়ে এবং পাতলা হয়ে যায়। চুল পড়ার রাসায়নিক কারণ খুবই জটিল।

চুল পড়ার অন্যান্য কারণ
-- ইনফেকশনজনিত যেমন-ব্যাকটেরিয়াঃ পায়োজেনিক, টিউবারকুলসিস; ফ্যাঙ্গাসঃ কেরিওন ভাইরাসঃ হারপিস ইনফেকশন; প্রোটোজোয়ারঃ লিশমেনিয়া।
-- শারীরিক ইনজুরিঃ কেমিক্যাল, পুড়ে যাওয়া।
-- মাথার ত্বকের রোগ যেমন-লুপার ইরায়থমেটাস লাইকেন প্লানাস।
-- এছাড়া যেসব পরিবার অ্যাজমা, থাইরয়েড রোগ, শ্বেতী, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্যারনেসিয়াস অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত সেসব পরিবারের লোকজনের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে।
-- বিভিন্ন রকম ওষুধ যেমন প্রেসারের ওষুধ, ক্যানসারের ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ইত্যাদি।
-- মানসিক দুশ্চিন্তা।

নানা উপায়ে চুল পড়া রোধ করা যায়, যেমন-
চুলের যত্মঃ প্রতি একদিন অন্তর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলা দরকার। ঘন ঘন শ্যাম্পু করার ফলে চুলের গোড়ায় জমে থাকা সাবান ও তৈলাক্ত পদার্থ থাকে, যাতে ডিএইচটি থাকে। এই ডিএইচটি চুল ঝরে পড়াকে ত্বরান্বিত করে থাকে। চুলের স্বাস্হ্যের সঙ্গে শরীর ও মনের স্বাস্হ্যও অনেকাংশে জড়িত। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণমত শাকসবজি ও ফল যথেষ্ট পরিমাণে খেতে হয় অর্থাৎ ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া অতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল চুল পড়ার কারণ হতে পারে।

এছাড়া যে সব ওষুধ গ্রহণের ফলে চুল ঝরে যেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।


ডা: মোহাম্মদ শওকত হায়দার
আমার দেশ, ১৮ নভেম্বর ২০০৮।


সুন্দর চুলের জন্য
চুল কেরাটিন নামের এক রকম প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। চুলে ৯৭ ভাগ প্রোটিন ও ৩ ভাগ পানি রয়েছে। চুলের যেটুকু আমরা দেখি সেটি মৃত কোষ। কারণ এতে অনুভূতিশীল কোনো কোষ নেই। একজন সুস্থ মানুষের মাথায় গড়ে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ চুল থাকে। প্রতিদিন ১০০টি পর্যন্ত চুল ঝরে পড়া স্বাভাবিক। এর থেকে বেশি চুল পড়লে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে চুল দ্রুত বড় হয় কিন্তু শীতকালে কম বড় হয়। একটি চুলের গড় আয়ু দুই-আট বছর। সুতরাং চুল কিছু না কিছু প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই ঝরে যায়।


চুলের কিউটিকন নষ্ট হয়ে গিয়ে চুলের কটেক্সের আঁশগুলো খুলে গেলে চুলের আগ ফেটে যায়। এতে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। মাথার তালুর সঠিক মাত্রায় রক্ত সঞ্চালনের জন্য চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ দরকার। নানারকম শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও সঠিক পরিচর্যার অভাবে চুলের স্বাস্থ্যও খারাপ হতে পারে। আপনার সুস্থতা প্রকাশ পায় আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য এবং চুলের স্বাস্থ্যের ভেতর দিয়ে। তাই সঠিক ডায়েট, প্রচুর ফলমূল, সঠিক পরিমাণে পানি পান করা, পর্যাপ্ত ব্যায়াম ও চিন্তামুক্ত ঘুম প্রয়োজন। এসব নিয়ম মেনে চললে চুলের সমস্যা সমাধান হওয়া উচিত। তবে খুশকি ও অন্যান্য সমস্যা যেমন চুল পড়া ও চুলের ডগা ফেটে যাওয়া রোধ করতে প্রয়োজন চুল ও তালু পরীক্ষা করা ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা।

চুলের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন। অনেক শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ চুল পড়া। তাই অবহেলা না করে এর সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। চুল খুব হালকা বা টাক হওয়ার আগেই চুল পড়া প্রতিরোধ করুন। সচেতন হোন।

চুল অতিরিক্ত পার্ম করা, অপর্যাপ্ত কন্ডিশনিং কিংবা অতিরিক্ত ব্রাশিংয়ের কারণে চুল ফেটে যেতে পারে। এ ছাড়া নিুমানের চিরুনি বা ব্রাশ ব্যবহার এবং সঠিকভাবে চুল না আঁচড়ানোর জন্যও এই সমস্যায় পড়তে পারেন। এ ছাড়া চুল শুকাতে গিয়েও হেয়ার ড্রায়ারের কারণে চুলের আগা ফাটতে পারে।

খুশকির কারণেও চুল শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং চুলের আগা ফেটে যায়। চুলের আগা ফেটে গেলে খুবই অস্বাস্থ্যকর দেখায় এবং চুল বড় হয় না। এ ক্ষেত্রে খুশকির সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। কিছু ব্যক্তিগত কারণ, যেমন­হরমোনের তারতম্য, খারাপ স্বাস্থ্য, বিশ্রামের অভাব ইত্যাদির প্রভাবও চুলের ওপর পড়তে পারে। টেনশন, মানসিক যন্ত্রণা, ঘুম না হওয়া বা কম হওয়া ইত্যাদির কারণেও চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। এ ছাড়া হেয়ার স্প্রে, জেল, মুজ ইত্যাদির অতি ব্যবহার এবং কৃত্রিম রঙ চুলের ক্ষতি করে।

মাথার তালুর দিকে বা ছেলেদের সামনের দিকে চুল পড়ে ফাঁকা হয়ে গেলে অবহেলা না করে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। বর্তমানে টাক চিকিৎসায় নতুন নতুন ওষুধ সংযোজন হয়েছে। টাকের কারণ ও ধরন নির্ণয় করে সাধারণত এসব ওষুধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা হলেও তা ফলপ্রসূ। সুতরাং চুলপড়া নিয়ে অকারণ দুশ্চিন্তা না করে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। নানাবিধ চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হয়ে সঠিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার মাধ্যমে চুল পড়ার চিকিৎসা করলে রোগী সুফল পাবেন।


ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি ও বৃহস্পতিবার)।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১ জুন ২০০৮


মাথার চুল পড়ে যাওয়া

মাথার চুল পড়ে যাওয়া এক অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা। দিন দিন মাথার চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ ঝরে যাচ্ছে বা টাক পড়ে যাচ্ছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা অনেক। চুল ঝরে যাওয়া বা টাক পড়া দু’ভাবে হয়ে থাকেঃ

এক. পুরো মাথার চুল পড়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে মাথার তালু বা চামড়া অতি সহজেই দেখা যায়।

দুই.মাথার কিছু কিছু অংশে গোল গোল আকারে চুল পড়ে যাওয়া।


সার্বিকভাবে পুরো মাথার চুল যেসব কারণে ঝরতে পারে
চুলে টান লাগাঃ প্রচলিত একটি ধারণা আছে, রাতে শোয়ার আগে টান টান করে বেণী বেঁধে ঘুমালে চুল তাড়াতাড়ি লম্বা হয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। চুল কতটুকু লম্বা হবে তা নির্ভর করে জেনেটিক, হরমোন ও পুষ্টির ওপর। বরং উল্টো ক্ষতিই হয়ে থাকে। যে চুলগুলো আরো কিছু দিন মাথায় থেকে তারপর ঝরে যাওয়ার কথা, তা আগেই ঝরে যায় অতিরিক্ত টান লাগার কারণে।

প্রসব পরবর্তীঃ সন্তান প্রসবের দুই থেকে পাঁচ মাস পর হঠাৎ চুল পড়ে যেতে থাকে। মাথা প্রায় খালিই হয়ে যায়। ২ থেকে ৬ মাস ধরে এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। তবে আশার বিষয়, এ চুল আবার সম্পূর্ণ গজিয়ে থাকে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকুন।
নবজাত অবস্থায়ঃ নবজাতকের মাথার চুল জন্মের পর থেকে ৪ মাসের ভেতর অনেকটা ঝরে যায়। এতে মা-বাবা ভয় পেয়ে যান, আমার সন্তানের মাথার চুল কি কম হবে? না, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ৬ মাস বয়সের সময় আবার চুল গজায়। কখনো কখনো পুষ্টিহীনতার কারণে চুল গজাতে একটু দেরি হতে পারে।

জ্বরের পরঃ কঠিন কোনো জ্বর যেমন­ নিউমোনিয়া, টাইফয়েড হওয়ার ২ থেকে ৪ মাস পর হঠাৎ চুল ঝরতে শুরু করে এবং প্রায় পাতলা হয়ে যায়। কিন্তু কিছু দিন পর এ চুল আবার গজিয়ে থাকে।

মানসিক কারণেঃ মানসিক রোগ বা দুশ্চিন্তা যদি বেশি থাকে তবে চুল পড়ে যায়।
ওষুধেঃ কিছু কিছু ওষুধে যেমন ক্যান্সারের ওষুধ, যে চুলগুলো মাত্র গজাচ্ছে, সেগুলোও ঝরিয়ে দেয়।

অনাহারঃ ওজন বা মেদ কমানোর জন্য অনেকে হঠাৎ খাওয়া-দাওয়া, একেবারেই ছেড়ে দেয়। এই হঠাৎ খাওয়া কমানো চুল পড়ার কারণ হতে পারে, যেমনটি হয় অপুষ্টিজনিত কারণে।

অ্যানড্রোজেন হরমোনঃ পুরুষ হরমোনের প্রভাবে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে পুরুষের কপালের দুই দিকে এবং মাথার মধ্য অংশে টাক পড়ে। যাকে বংশগত টাকও বলা হয়।

এজাতীয় বংশগত টাক ঠেকাতে এবং টাক পড়া স্থানে কিছু চুল গজাতে সক্ষম এমন ওষুধ এখন বাজারে পাওয়া যায়। যার বৈজ্ঞানিক নাম ফিনাস্টেরয়েড। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এ জাতীয় ওষুধ শুধু ছেলেদের জন্য। মেয়েরা খেতে পারবে না। মাথার চুলের আনুমানিক সংখ্যা প্রায় ১ লাখ, এর মধ্যে ৭০ থেকে ১০০টি চুল প্রতিদিন ঝরে যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এই ১০০টির বেশি চুল পড়ে তখনই মাথার তালু খালি হয়ে যেতে থাকে।

মাথার চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে খুশকি। মাথা চুলকালে গুঁড়ো গুঁড়ো খোসা দেখা যাওয়াটাকে খুশকি বলে। তবে কখনো কখনও খোসা দেখা যায় না, মাথায় শুধু তেলতেলে ভাব থাকে। এই খুশকি যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তবে মাথার চুল আছে তাকে হয়তো আরো ১০ থেকে ২০ বছর টিকিয়ে রাখা যাবে। অন্যথায় ৫ মাস থেকে এক বছরে মাথায় টাক পড়ে যাবে। তবে একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো খুশকি বা তেলতেলে ভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হরমোন (এনড্রোজেন)-এর প্রভাবে হয়ে থাকে। সুতরাং এমতাবস্থায় খুশকিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, আর খুশকি হবে না এটা সম্ভব নয়। যেহেতু এনড্রোজেন হরমোন কমানো উচিত নয়। অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারে খোসা খোসা ভাব খুশকি খুব দ্রুত নির্মূল হয়ে যায়। কিন্তু তেলতেলে ভাব তো প্রতিদিনই হয়। অন্য দিকে অ্যান্টিডেনড্রাফ শ্যাম্পু প্রতিদিন ব্যবহার করা যায় না, তাতে চুলের ক্ষতি হয়। তা হলে যা দাঁড়াল তা হচ্ছে­ খোসা খোসা ভাব খুশকি দূর করা সম্ভব হচ্ছে, চুল পড়া রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় প্রয়োজন প্রতিদিন এমন কিছু দিয়ে মাথা ধুতে হবে যাতে চুলের ক্ষতি না হয়। এ সিস্টেমে খুশকি হয়তো ভালো হবে না তবে খুশকি ও তেলতেলে ভাব নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং চুলও কম ঝরবে।
মাথার গোল টাকঃ এ অবস্থায় রোগী কোনো এক দিন ঘুম থেকে উঠে দেখে যে মাথায় কিছু কিছু অংশে গোলাকার টাক পড়েছে। আক্রান্ত স্থানের ত্বক মসৃণ, কোনো চুলকানি বা লালা ভাব নেই, কোনো খোসাও নেই। প্রচলিত ধারণা হচ্ছে তেলাপোকা চুল খেয়ে ফেলেছে। না, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এ অবস্থা বেড়ে গিয়ে সম্পূর্ণ মাথায় এমনকি শরীরের লোমও ঝরে যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে স্টেরয়েড ইনজেকশন দিয়ে আকারে বেড়ে যাওয়াটাকে রোধ করা যায় এবং নতুন চুল গজাতে থাকে। প্রতি মাসে একবার ইনজেকশন দিতে হয়।


ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি ও বৃহস্পতিবার)।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১১ মে ২০০৮


চুলপড়ার যত সমস্যা

চুল কেন পড়ে? এ প্রশ্ন আজ আমাদের প্রায় সবার। এই চুলপড়া রোধে সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ১ বিলিয়নেরও বেশি ডলার খরচ হয়। নানা উপায়ে আমরা চুলপড়া রোধ করতে চাই। অনেক রকমের ইনফেকশন, বিভিন্ন রোগ, ওষুধের ব্যবহার এবং খাদ্যের ভিন্নতর কারণে সাধারণত চুল পড়ে যায়। কিন্তু গবেষকরা গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন যে, ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ জিনগত। বাবা কিংবা মা অথবা দু’জনের কাছ থেকে আগত জিনই নির্ধারণ করে দেয় কখন আমাদের চুল পড়বে। এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া এবং অ্যানড্রোজেন অর্থাৎ পুরুষদের হরমোন এই সমস্যার জন্য দায়ী।

গবেষকরা বিশ্বাস করেন, চুল পড়ার জন্য চুলের গোড়ার বা ফলিকলে একটি এনজাইম তৈরি হয়, যার নাম ফাইভ আলফা রিডাকটেজ। এই এনজাইম রক্তে অতিবাহিত হরমোন টেস্টস্টেরনকে ডাই হাইপ্রোটেস্টস্টেরনে পরিণত করে। যার আরেক নাম ডিএইচটি। ডিএইচটি চুলের গোড়ায় আক্রমণ চালায় এবং চুল দুর্বল করে ঝরে পড়তে সাহায্য করে। পুরুষদের চুল সাধারণত সামনের দিকে পড়ে এবং টাকে পরিণত হয়। আর মহিলাদের পুরো মাথার চুলই এককভাবে পড়ে এবং পাতলা হয়ে যায়। মহিলাদের শরীরে অ্যারোমাটেজ নামে এক প্রকার এনজাইম তৈরি হয় যা ডিএইচটিকে ইস্ট্রোজেনে পরিণত করে। এতে কিছু হলেও মহিলাদের চুর রক্ষা পায়। চুল পড়ার রাসায়নিক কারণ খুবই জটিল।

চুলপড়া রোধে এবং নতুন চুল গজানোর জন্য মাথায় অনেক সময় নানারকম ভিটামিন ও ভেষজ নির্যাসযুক্ত তেল দেয়া হয়। এ ছাড়া ড্রাকোনিয়ান পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে চুলের গোড়ায় মৃদু ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়। এতে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করা হয়। কিছু কিছু শ্যাম্পু ও জেল ব্যবহারে চুল ঘন দেখায়। নানা ভেষজ গুণসম্পন্ন এসব দ্রব্য চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করে। তাছাড়া চুলের জৌলুস বাড়িয়ে দেখতে ভালো দেখায়।

চুলের জন্য ব্যয়বহুল চিকিৎসা গ্রহণের আগেই আমরা চুলের কিছু নিজস্ব যত্ন নিয়ে দেখতে পারি।

প্রতি একদিন অন্তর অন্তর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলা দরকার। অবশ্যই সেই শ্যাম্পু দিয়ে, যা আপনার চুলের জন্য উপযোগী। বন্ধু-বান্ধবের কথায় বা চটকদার বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ না হয়ে নিজের উপযোগী শ্যাম্পু নিজের পছন্দ করাই ভালো। গবেষকরা জানান, ঘন ঘন শ্যাম্পু করার ফলে চুলের গোড়ায় জমে থাকা সাবান ও তৈলাক্ত পদার্থ থাকে, যাতে ডিএইচটি তা ধুয়ে যায়। আগেই বলা হয়েছে, ডিএইচটি চুল ঝরে পড়াকে ত্বরাম্বিত করে থাকে। আবার এভাবে চুল ধোয়ার পর প্রথম দিকে আপনার মনে হতে পারে, চুল বোধহয় আগের তুলনায় বেশি ঝরে যাচ্ছে। কিন্তু না, শুধুমাত্র সেই চুলগুলো ঝরে যাচ্ছে, যার গোড়া আলগা হয়ে আছে এবং দু-একদিনের মধ্যেই ঝরে পড়তো। ভেজা চুল বেশি আঁচড়ানোর কারণে এবং ঘষাঘষির কারণেও চুল বেশি পড়তে পারে। এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া দরকার। চুলের স্বাস্থ্যের সাথে শরীর ও মনের স্বাস্থ্যও অনেকাংশে জড়িত। আপনি কেমন খাবার গ্রহণ করছেন, তার ওপরে আপনার চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণগত শাক-সবজি, ফল যথেষ্ট পরিমাণে অর্থাৎ ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া অতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল চুল পড়ার কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিউট্রশনিষ্ট কিংবা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। এ ছাড়া মানসিক চাপ এবং অন্যান্য ওষুধ গ্রহণের ফলে চুল ঝরে যাচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে লক্ষ্য রেখে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।


ডা· ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড রোড নং -২৮, বাড়ি নং -১৬ ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা।

দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ মে ২০০৮


যে সব কারণে চুল পড়ে

দিন দিন মাথার চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ঝরে যাচ্ছে চুল, টাক পড়ে যাচ্ছে এমন লোকের সংখ্যা অনেক। অনেক সময় শুধু সামনের দিকের চুল পড়ে । আবার অনেক সময় পুরো মাথার চুলই হালকা হয়ে যায়। প্রতিদিন যদি ১০০টি চুল পড়ে তখন মাথা ফাঁকা হতে শুরু করে। চুল ঝরে পড়ার নানা কারণ রয়েছে। প্রচলিত ধারণা আছে, চুল টেনে বাঁধলে চুল দ্রুত লম্বা হয়। এটি ভুল ধারণা। এতে চুল ঝরে পড়ে দ্রুত। প্রসব পরবর্তী দুই-পাঁচ মাস পর্যন্ত চুল বেশি ঝরতে পারে। তবে এ ব্যাপারে চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। জ্বর বা অন্যান্য অসুখের সময়ও চুল পড়ে যায়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কিছু দিন পর এ চুল আবার গজিয়ে থাকে।
দীর্ঘ দিন মানসিক দুশ্চিন্তা ও বিষাদগ্রস্ত থাকলে চুল পড়তে শুরু করে। দুশ্চিন্তা বেশি দিন থাকলে মাথা ফাকা হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

কিছু কিছু ওষুধের কারণে চুল বেশি পড়তে পরে। যেমন ইডোমেথাসিন, জেন্টামাইসিন ইত্যাদি। আবার ক্যানসারের ওষুধে চুল খুব বেশি ঝরে যায়।

কম খাওয়া-দাওয়া বা পুষ্টিহীনতাও চুল পড়ার কারণ। ওজন কমানোর জন্য কম খেতে শুরু করার পর অনেকেরই চুল পড়ে যায়।

খুশকি চুলের একটি বড় শত্রু। চুল পাতলা হওয়ার অন্যতম কারণ খুশকি। মাথা চুলকালে গুঁড়া গুঁড়া খোসা দেখা যাওয়াটাকেই খুশকি বলে। খুশকি দমিয়ে রাখতে পারলে মাথায় যে চুল আছে তা অন্তত ১৫-২০ বছর টিকিয়ে রাখা যাবে। আবার অনেকের মাথার ত্বক তেলতেলে ভাব থাকে। এগুলোর চিকিৎসা প্রয়োজন। পুরুষ হরমোনের প্রভাবেও চুল পড়ে। তাই টাক পড়ার আগেই চুল ঝরার কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা নিন।


ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি ও বৃহস্পতিবার)।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ০৪ মে ২০০৮


স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য

চুল নিয়ে আজকাল অনেকেরই ভাবনার অন্ত নেই। বলা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর চুল সবারই কাম্য। আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সমান ভারী চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল যায়। এ ছাড়া চকচকে কালো চুল ও মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকতে হবে।

স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য। সঠিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে প্রচুর শাকসবজি, ফল ও সালাদ। খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের অভাবে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়, চুল ঝরে পড়ে।

সঠিক পরিমাণে পানি পান করলে শরীর থেকে বর্জø পদার্থ বেরিয়ে যায়।

নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।

মাথায় ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার রাখাও প্রয়োজন।

প্রেটিন এবং আপনার চুুল

প্রেটিনের অভাবে চুলের রঙ প্রথমে নষ্ট হয়ে যায়। চুল লালচে বাদামি হতে থাকে। পরে চুল ঝরে যায় এবং চুলের আগা ফাটতে থাকে। কেরাটিনের অভাবে চুল ফেটে যায়। খাদ্য তালিকায় মাছ, গোশত, ডিম, দুধ, ডাল, দই, পনির ইত্যাদি থাকা জরুরি। এতে কেরাটিন তৈরিতে সহায়তা হয়। ভিটামিন এবং আপনার চুল

ভিটামিন ‘এ’র অভাবে চুল রুক্ষ ও প্রাণহীন হয়ে ওঠে। আবার অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’র জন্য চুল ঝরে পড়তে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’র জন্য অল্প অল্প করে চুল জায়গায় জায়গায় উঠে গিয়ে টাক পড়ে যায়। খাদ্য তালিকায় দুধ, গাজর, মুলা, সবুজ শাকসবজি থাকা প্রয়োজন। ভিটামিন ‘সি’র অভাবে চুল খসখসে শুষ্ক হয়ে ওঠে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তাই লেবুজাতীয় ফল, কমলালেবু, মোসম্বী ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন। ভিটামিন ‘বি’ চুুলকে চকচকে ও ঘন করে তোলে। শস্যদানা, দুধ, ডিম, কলা, বাদাম, কলিজা ও ডালে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’। প্রতিদিন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে এবং চুল ঝরেবে না।

স্নেহপদার্থ এবং আপনার চুল

চুল তৈলাক্ত হলে প্রাণীজ জাতীয় খাবার পরিহার করুন। উদ্ভিজ্জ তেল খেতে পারেন। সম্পৃক্ত চর্বি গরু-খাসির গোশত কম খাবেন। দুধ বা ননী তোলা দুধ, পনির ও দই খেতে পারেন।

স্বাস্থ্যহীন চুলের কারণঃ সুষম খাবার না খাওয়া স্বাস্থ্যহীন চুুলের প্রধান করাণ। খাদ্য তালিকা সঠিক না হওয়ার কারণে চুল ঝরে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার ও ভিটামিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় হেলমেট, টুপি ইত্যাদি পরে থাকা, চুলে নানা কেমিক্যাল ডাই ব্যবহার করা, সঠিকভাবে চুল পরিষ্কার না করা, খুশকি ও অন্যান্য রোগ, অতিরিক্ত রোদে বের হওয়া এবং চুল ভেজা থাকা, শারীরিক অসুখ-বিসুখ, মানসিক চাপ, ঘুম না হওয়া এবং হরমোনের তারতম্যজনিত কারণ, স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়লে এবং চুল ঝরে পড়লে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। সুষম আহার চুলের সঠিক পরিচর্যা এবং প্রয়োজনে কিছু ঔষধের ব্যবহারে চুর স্বাস্থ্যেজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।

**************************
ডা• ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেড, বাড়ি-১৬, রোড-১৫ (নতুন), ২৮ (পুরাতন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা।
দৈনিক ইত্তেফাক, ২৬ এপ্রিল ২০০৮


চুলের যত্নে কন্ডিশনার

চুলের যত্নে কন্ডিশনারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কন্ডিশনার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন­
১। ইনস্ট্যান্ট কন্ডিশনারঃ এটি শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে লাগাতে হয় এবং ২-৩ মিনিট রেখে আলতো করে ধুতে হয়। হালকা ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য উপকারী ইনস্ট্যান্ট কন্ডিশনার।
২। ডিপ/গভীর কন্ডিশনারঃ এটিও একই নিয়মে ব্যবহার করতে হয় কিন্তু ৫-১০ মিনিট চুলে রেখে দিতে হয়। রাসায়নিক উপাদানে ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য ডিপ কন্ডিশনার প্রয়োজন।
৩। লিভ ইন কন্ডিশনারঃ চুল শ্যাম্পু করার পর তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে তারপর সেই চুলে লিভ ইন কন্ডিশনার লাগাতে হয়। লিভ ইন কন্ডিশনার ধুয়ে ফেলতে হয় না।
খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য লিভ ইন কন্ডিশনার উপযুক্ত।
চুলে তেল দেয়াঃ চুলে তেল দেয়া এক ধরনের কন্ডিশনার। সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হলেও বিশেষজ্ঞরা বলেন, তেল চুল গজাতে বা চুলে পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে না। তবে তেল ম্যাসাজ করলে স্ক্যালেন্ড রক্ত সঞ্চালন হয় এবং চুল বাহ্যিকভাবে চকচকে, মসৃণ হয়।
? হালকা গরম করে যেকোনো তেল মাথায় সপ্তাহে দু’দিন ম্যাসাজ করা যেতে পারে।
? শ্যাম্পু করার ১-২ ঘণ্টা আগেও তেল মাথায় লাগানো যেতে পারে।
? সুগন্ধি তেল পরিহার করাই ভালো।
? চুল স্বাভাবিকভাবেই তৈলাক্ত হলে তেল না লাগানোই ভালো। কেননা এতে খুশকি হতে পারে।
? শুষ্ক স্ক্যাল্পে অলিভ, নারিকেল, সানফ্লাওয়ার, বাদাম তেল যেকোনোটাই লাগাতে পারেন।
চুলের জন্য ব্যবহৃত কিছু সামগ্রীঃ শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, তেল ছাড়াও চুলে বর্তমানে আরো কিছু উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো আসলে চুলের স্টাইলের কারণে ব্যবহার করা হয়।
হেয়ার স্প্রেঃ এটি এমন এক ধরনের সলিউশন যা চুল বাঁধার পরে বা স্টাইল করার পরে চুলে স্প্রে করলে চুল স্টাইলমতো থাকে। চুলের হেরফের হয় না। তবে স্প্রে চুলতে শক্ত করে দেয়। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের জন্য ক্ষতিকরও বটে। তবে প্রয়োজনে হেয়ার স্টাইল বজায় রাখতে হেয়ার স্প্রে’র জুড়ি নেই। স্প্রে ব্যবহারের পরে চুল ভালো করে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং করবেন।
হেয়ার জেলঃ তরুণ প্রজন্মের কাছে জেল খুব জনপ্রিয়। জেল দিয়ে নানাভাবে চুল আঁচড়ানো এবং বাঁধা আজকাল হাল ফ্যাশান। তবে নিয়মিত ব্যবহারে এটিও ক্ষতিকর।
মুজঃ এটি ফোমের মতো এবং চুলকে শক্ত করে না। ফোমের মতো হাতে নিয়ে চুলে মেখে তারপর চুল ব্লো ড্রাই বা অন্য স্টাইল করা হয়।


ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২০ এপ্রিল ২০০৮


চুল পড়ার কারণ

ত্বকের সাথে সাথে নিয়মিত চুলের যত্ন নেয়া জরুরী। দৈনিক কিছু চুল স্বাভাবিকভাবে পড়ে যায়, বদলে গজায় কিছু কিন্তু চুল পড়া ও চুল গজানোর হারের সমতা যাকে না যখন তখনই চুল পাতলা হতে শুরু করে, দিনে ১০০ টা চুল পড়লে তা স্বাভাবিক। অনেক রকম ইনফেকশন, বিভিন্ন রোগ, ওষুধের ব্যবহার এবং খাদ্যের বিভিন্নতা কারণে সাধারণ চুল পড়ে যায়। তবে ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ জিনগত বা বংশগত। এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যানড্রেজেনিক অ্যালো ও পেসিয়া এবং অ্যানড্রোজেন অর্থাৎ পুরুষ রেমোন এই সমস্যার জন্য দায়ী।

চুল পড়ার জন্য ডিএইচটি রেমোন দায়ী। পুুরুষদের চুল সামনের দিকে পড়ে টাকে পরিণত হয় এবং মহিলাদের পুরো মাথার চুলই একক ভাবে পড়ে এবং পাতলা হয়ে যায়। চুল পড়ার রাসায়নিক কারণ খুবই জটিল।

চুল পড়ার অন্যান্য কারণসমূহ
ইনফেকশনজনিত যেমনঃব্যাকটেরিয়াঃ পায়োজেনিক , টিউবারকুলসিস ,ফ্যাঙ্গাসঃ কেরিতন।

ভাইরাসঃ হারপিস ইনফেকশন।

প্রোটোজোয়ারঃ লিশমেনিয়া

শারিরীক ইনজুরিঃ কেমিক্যাল পুড়ে যাওয়া।

মাথার ত্বকের রোগ যেমন লুপার ইরায়থমেটাস

লাইকেন প্লানাস


এছাড়া যেসর পরিবারে অ্যাজমা, থাইরয়েড রোগ, শ্বেতী, রিউমাটয়েড আথ্রাটিস, প্যারনেসিয়াস অ্যানিমিয়া রোগ আক্রান্ত সেসব পরিবারের লোকজনের এ রোগ দেখা দিতে পারে।

বিভিন্ন রকম ওষুধ যেমন প্রেসারের ওষুধ ক্যনসারের ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রিন পিল ইত্যাদি , মানসিক দুঃশ্চিন্তা

নানা উপায়ে চুলপড়া রোধ করা যায় যেমনঃ

চুলের যত্ন প্রতি একদিন অন্তর অন্তর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলা দরকার, ঘন ঘন শ্যাম্পু করার ফলে চুলের গোড়ার জমে থাকা সাবান ও তৈলাক্ত পদার্থ থাকে, যাতে ডিএইচটি ধুয়ে যায়। এই ডিএইচটি চুল ঝরে পড়াকে ত্বরানিত করে থাকে। চুলের স্বাস্থ্যের সাথে শরীর ও মনের স্বাস্থ্য এবং অনেকাংশে জড়িত। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণমত শাকসবজি, ফল যথেষ্ট পরিমাণে অর্থাৎ ভিটামিন ও মিনারেল সমুদ্ধ খারার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া অতিরিক্ত ডায়েট কন্টোÝল চুল পড়ার কারণ হতে পারে। এছাড়া যে সকল ওষুধ গ্রহণের ফলে চুল ঝরে যেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।


ডাঃ মোহাম্মদ শওকত হায়দার
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেজার ও কসমেটিক সার্জন কুইনস হাসপাতাল, যশোর

দৈনিক ইত্তেফাক, ০৫ এপ্রিল ২০০৮


স্বাস্থ্যসম্মত চুলের যত্ন

এক-একজনের চুল এক-এক ধরনের। চুলের ধরন বুঝে যত্ন নিতে হয়।

তৈলাক্ত চুলের যত্নঃ

তৈলাক্ত চুল নানা কারণে হতে পারে।

জন্মগত বা বংশগত কারণে। ঢ় অতিমাত্রায় হরমোনের কারণে।

খুব বেশি চুল আঁচড়ানোর ফলে সেবাশিয়াস গ্রন্থি সক্রিয় হয়ে উঠলে।

চুল খুব কম পরিষ্কার করলে।

যত্ন

ব্রাশের বদলে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াবেন। ঢ় তৈলাক্ত চুলের জন্য উপযোগী শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোবেন ও কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।

চুল ধোয়ার সময় শেষবার লেবুর রস মিশ্রিত পানি দিয়ে চুল ধোবেন।

মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার প্রয়োজন না হলে করবেন না।

সুষম খাদ্য গ্রহণে সচেষ্ট হবেন।

মিশ্র চুলের যত্ন

কিছু চুল আছে যার গোড়ায় তেলতেলে কিন্তু চুলের আগা রুক্ষ।

রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে চুলের স্টাইল যেমন পার্মিং ইত্যাদি করতে গিয়ে এমনটা হতে পারে।

যত্নঃ

তৈলাক্ত চুলের মত ব্রাশের বদলে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান।

শুষ্ক ও তৈলাক্ত দুই ধরনের শ্যাম্পু এক দিন অন্তর অন্তর ব্যবহার করবেন। ঢ় শুধু চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।

রাসায়নিকদ্রব্য চুলে ব্যবহার করবেন না।

স্বাভাবিক চুলের যত্ন

স্বাভাবিক চুল খুবই ভাগ্যের ব্যাপার।

বংশগত কারণে চুল স্বাভাবিক সুন্দর হতে পারে।

চুলের সঠিক যত্নের কারণেও চুল স্বাভাবিক থাকে।

নির্দিষ্ট সময় পরপর চুলের আগা কাটতে হবে।

সঠিক কন্ডিশনার ও শ্যাম্পু ব্যবহার প্রয়োজন।

রাসায়নিক উপাদান পরিহার করতে হবে।

সপ্তাহে এক দিন ম্যাসাজ করা ভালো।

চুল খুব টেনে বাঁধবেন না, দিনে দু থেকে তিনবার চুল আঁচড়াবেন।

ভেজা চুল কখনো বাঁধবেন না।

চুলে শ্যাম্পু করাঃ

চুলের যত্নে চুল পরিষ্কার রাখার জন্য শ্যাম্পু অপরিহার্য উপাদান। হিন্দি শব্দ চ্যাম্পু থেকে শ্যাম্পু এসেছে। এর অর্থ মালিশ বা ম্যাসাজ। এর মানে বোঝা যায় শ্যাম্পু করার সময় আপনার মাথা ম্যাসাজ বা ঘষতে হবে।

চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু বেছে নিতে হবে। তৈলাক্ত চুলে যেমন প্রায় প্রতিদিন শ্যাম্পু করা প্রয়োজন আবার শুষ্ক চুলে তা নয়। হেয়ার স্টাইল, জীবনযাত্রার মান, পরিবেশ দূষণ, আবহাওয়া এগুলোর ওপরে নির্ভর করে আপনি সপ্তাহে কতবার শ্যাম্পু করবেন।

তৈলাক্ত চুল, প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম, দূষণ, প্রতিদিন বাইরে যাওয়া এমনটা যদি হয় আপনার জীবনযাত্রা তবে প্রতিদিন শ্যাম্পু করতে হবে। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে দু’দিন শ্যাম্পু ব্যবহার যথেষ্ট। চুলে ময়লা ভাব, মাথা চুলকাচ্ছে এমন হলে সাথে সাথে শ্যাম্পু করবেন। প্রতিদিন প্রয়োজনে শ্যাম্পু করলে চুল পড়ে এটা ভুল ধারণা। তবে অপ্রয়োজনে শ্যাম্পু করলে চুল শুষ্ক হয়ে ওঠে ও চুল ভেঙে যায়।

এছাড়া সূর্যতাপ, লবণ পানি, ক্লোরিনযুক্ত পানি চুলের ক্ষতি করে। এরকম হলে যথাযথ শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুলের লবণ ভাব, ক্লোরিন ইত্যাদি দূর করতে হবে।

শ্যাম্পু করার পদ্ধতিঃ ঢ় হালকা গরম পানিতে সম্পূর্ণ চুল ভিজিয়ে নিন।

হাতে শ্যাম্পু ঢেলে নিন এবং দু’হাতে ঘষে নিয়ে তারপর পুরো মাথায় লাগান। ঢ় আঙুলের ডগা দিয়ে ম্যাসাজ করে শ্যাম্পু লাগান।

প্রয়োজনে চুল লম্বা হলে আবার শ্যাম্পু নিয়ে হাতে ঘষে তারপর চুলে লাগান। ঢ় এভাবে কিছুক্ষণ হালকাভাবে ঘষার পরে চুল প্রচুর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ঢ় প্রয়োজনে পুনরায় শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।

চুল পরিষ্কার হয়েছে কি না, তৈলাক্ত ভাব কেটেছে কি না, আপনি হাত দিয়েই তা বুঝবেন।

শ্যাম্পু পরিষ্কার করার জন্য প্রচুর পানি দিয়ে ধোবেন যাতে শ্যাম্পুর অবশিষ্ট অংশ চুলে লেগে না থাকে।

শ্যাম্পু করার পর চুল খুব বেশি ঘষাঘষি না করে নরম তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে রাখবেন।
মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে হালকাভবে চুল আঁচড়ে রাখবেন। ব্রাশ ব্যবহার করবেন না।


ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২৩ মার্চ ২০০৮


চুলের গঠন ও অল্প বয়সে চুল পড়া

চুল ত্বকেরই অঙ্গ। ত্বকের উপরিতলের কোষ বা এপিডারমাল সেল থেকে চুলের উৎপত্তি। হেয়ার ফলিকল তৈরি হয় এপিডারমাল সেল থেকে। হেয়ার ফলিকলের একেবারে গভীরতর অংশ বা হেয়ার বালবের বিভাজনে তৈরি হয় নতুন নতুন কোষ। এই নবীন কোষগুলোতে বিশেষ ধরনের প্রোটিন জমতে থাকে, যা ত্বকের সাধারণ প্রোটিন থেকে কিছুটা আলাদা ও শক্ত। হেয়ার বালবের মধ্যের মেলানোসাইট চুলের রঙ সরবরাহ করে। চুলের পুষ্টি আসে হেয়ার বালবের শিরা-উপশিরা থেকে। হেয়ার বালব থেকে তৈরি হওয়া কোষগুলো একত্রে একটি দন্তের মতো উপরিতলের দিকে বাড়তে থাকে। জীবন্ত কোষগুলো ক্রমেই মৃত্যুর দিকে এগোয়, জমে ওঠা শক্ত কেরাটিনের একটি টালিতে পরিণত হয়। চুলের এই দন্ডের চারপাশে হেয়ার ফলিকলের দেয়াল লেপটে থাকে। ত্বকের উপরিভাগের কাছে এসে হেয়ার শ্যাফট তার চার পাশের দেয়াল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি মোটা কালো সুতার মতো ত্বকের উপরিভাগ থেকে বেরিয়ে আসে। তাই চুলের পুষ্টি সঞ্চালন করতে হলে হেয়ার ফলিকলের নিচে, ত্বকের গভীরে হেয়ার বাল্বে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে হবে এবং সেই রক্তে চুল তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান ঠিকভাবে থাকতে হবে। আগাগোড়া হেয়ার ফলিকল বা চুল তৈরির কারখানাটিও ঠিক থাকা দরকার।

ত্বকের গভীরে যেখানে হেয়ার বাল্বের কোষগুলো রয়েছে যেখান থেকে ক্রমাগত নতুন কোষ সৃষ্টি হয়ে চুলের দণ্ডের গোড়ার দিকে যুক্ত হচ্ছে এবং দণ্ডটিকে ক্রমাগত উপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জীবন্ত কোষগুলো উপরের দিকে ওঠার সময় কেরাটিন সঞ্চয় করছে, শক্ত হচ্ছে, মৃত কোষে পরিণত হচ্ছে। এই মৃত কোষের সমষ্টিই চুল হিসেবে ত্বকের উপরিভাগে ক্রমাগত এগিয়ে এসে অবশেষে ত্বকের বাইরে চুল হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

অল্প বয়সে টাক পড়া
অল্প বয়সে টাক পড়ার নানা কারণ রয়েছে। পুরুষদের জন্য এন্ড্রোজেনিক এলোপেসিয়া শুরু হয় কপালের দু’পাশে রগের কাছে। তারপর ক্রমেই বাড়তে বাড়তে সামনে ও চাঁদিতে ছড়িয়ে পড়ে। এটা পুরুষ সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরন ও জেনেটিক প্রভাবের কারণে হয়। চুলের বৃদ্ধি অনেকাংশে টেস্টোস্টেরনের ওপর নির্ভরশীল। চুলের গোড়ায় কিছু রিসেপ্টর থাকে যারা এই হরমোনের উপস্থিতিতে চুলের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে একই মাত্রায় হরমোন থাকা সত্ত্বেও চুলের তারতম্য হয়। এজন্যই পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে সামনের চুল সরে যেতে থাকে। অবশ্য চুল পড়ার জন্য থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ, রক্তস্বল্পতা, ওভারির অসুখ, বা অন্য কোনো এন্ডোক্রাইন অসুখও হতে পারে। বর্তমানে চুল পড়া বা টাকের আধুনিক চিকিৎসা এসেছে। বাজারে প্রচলিত শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনে মোহিত না হয়ে অল্প বয়সে চুল পড়া শুরু হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। রূপচর্চার নামে নানা অপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহারে ত্বক ও চুলের ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ, বিভিন্ন কেমিক্যাল ক্ষার ও ইনসেকটিসাইড ব্যবহার, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ ইত্যাদিও পরোক্ষভাবে চুল পড়ার জন্য দায়ী।

আধুনিক জীবনযাত্রা স্বাভাবিক সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য আমার কথা এই যে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর প্রতিকার আছে।


ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৬ মার্চ, ২০০৮


শীতে ত্বক ও চুলের পরিচর্যা

শীতকালে ত্বক ও চুল রুক্ষ হয়ে যায়, চেহারা হারায় তার স্বাভাবিক শ্রী, তাই ত্বক ও চুলের বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। সঠিক ক্রিম, তেল, সাবান, শ্যাম্পুর ব্যবহার, প্রয়োজনীয় খাদ্যগ্রহণ ও জীবনযাত্রার সামান্য পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আমরা শীতকালেও ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতে পারব।


শীতকালে ক্রিম, সাবান যাই ব্যবহার করবেন লক্ষ রাখবেন তা যেন ময়েশ্চারাইজারযুক্ত হয়। দিনে অন্তত দু’বার ক্রিম ব্যবহার করবেন। আলফা হাইড্রক্সি বা ভিটামিন-ই যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করা ভালো। গোসলের আগে শরীরে অলিভ অয়েল মাখতে পারেন অথবা গোসলের শেষে অল্প পানিতে কিছুটা অলিভ অয়েল দিয়ে গা ধুয়ে নিন। তারপর আলত করে গা মুছবেন।

সাধারণত আমরা মনে করি, শীতকালে সানস্ক্রিন প্রয়োজন হয় না। এটি ভুল ধারণা। ত্বক বিশেষজ্ঞের মতে, টঠঅ রশ্মি ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকারক। টঠঅ রশ্মি ত্বকে দ্রুত বলিরেখা ফেলতে সহায়তা করে। ত্বকে উপযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে বার্ধক্যজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। একথা ঠিক যে, সূর্যরশ্মি সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের জন্য প্রয়োজন। এতে যে ভিটামিন পাওয়া যায় তা প্রয়োজনীয়। কিন্তু বেশি সূর্যরশ্মি ও টঠঅ রশ্মি ত্বকে অপূরণীয় ক্ষতি ও অকালবার্ধক্যের কারণ। সানস্ক্রিন টঠঅ-এর দাহ্যতা কমিয়ে দেয়। শীতকালেও নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।

শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে বিধায় ত্বকের এপিডার্মাল লেয়ার থেকে আর্দ্র ভাব কমে যায়। এর ফলে ত্বকে বলিরেখা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ময়শ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। তা ছাড়া গোলাপজল ও গ্লিসারিন ৩ঃ১ অনুপাতে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। শীতের আরেক সমস্যা হচ্ছে ঠোঁট ফাটা ও কালো হয়ে যাওয়া। এর সমাধানও গ্লিসারিন। বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে গ্লিসারিন লাগাবেন।


হাত-পায়ের ত্বক ফেটে গেলে তারপর গ্লিসারিন বা ভেসলিন না মেখে বরং ফেটে যাওয়ার আগেই গ্লিসারিন মেখে নেয়া ভালো।


শীতে ত্বকের যত্নে আপনাকে অবশ্যই কিছু সময় দিতে হবে। মহিলারা যারা নিয়মিত ফেসিয়াল, স্ক্র্যাব ম্যাসাজ করান তারা শীতকালেও নিয়মিত চালিয়ে যান। শীতকালের জন্য ফেসিয়াল ও স্ক্র্যাব ম্যাসাজ বেশ ভালো। কারণ এতে ত্বকের মরা কোষ উঠে যেতে সাহায্য করে।


বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার কারণে শীতে চুল হয়ে উঠে রুক্ষ এবং খুশকির উপদ্রব হয়। খুশকির জন্য ভালো শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। প্রয়োজনে ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। বাজারচলতি বা আকর্ষক বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ হয়ে কখনো শ্যাম্পু কিনবেন না। ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নাইজোরাল শ্যাম্পু কিংবা সেলসান শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।


চুল সাধারণত দু’রকম, তৈলাক্ত ও শুষ্ক, চুল তৈলাক্ত হওয়ার অর্থ যে ত্বকের ওপর আপনার চুল অর্থাৎ স্ক্যাল্প সেই ত্বকে সেবাশিয়াস গ্রন্থির অতিরিক্ত সেবাম নিঃসরণের ফলে চুল তৈলাক্ত হয়ে পড়ছে। আর চুল শুষ্ক হওয়ার অর্থ যে ত্বকের ওপর আপনার চুল অর্থাৎ স্ক্যাল্প সেই ত্বকে সেবাশিয়াস গ্রন্থির ক্ষরণ খুব কম হয় যার ফলে চুল শুষ্ক হয়ে পড়ছে।

তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখা জরুরি। একদিন অন্তর অন্তর চুলের উপযোগী শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুলে ভালো। শুষ্ক চুলের ক্ষেত্রে হটওয়েল থেরাপি ভালো কাজ করে। সামান্য গরম অলিভ অয়েল চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে তারপর গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখতে হবে ১৫ মিনিট। এরপর চুলের উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলবেন।


ভেজা চুল কখনো আঁচড়াবেন না। তোয়ালে দিয়েও খুব ঘষে চুল মুছলে চুলের ক্ষতি হয়। ভিজা চুল কখনো বাঁধবেন না।


রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বজ্রাসনে বসে চুল আঁচড়াবেন। এতে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং আপনি মানসিক চাপমুক্ত হয়ে ঘুমাতেও পারবেন।


শীতকালে ত্বকের ও চুলের যত্নে কিন্তু আপনাকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও মনোযোগী হতে হবে। শীতের শাকসবজি ও ফল সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক ও চুলের জন্য প্রয়োজন। শিম, বরবটি, নানারকম শাক, মটরশুঁটি, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন। দেশী-বিদেশী, হাতের নাগালের সব ফলই প্রতিদিন খাবেন। আপেল, আমলকী কিংবা আমড়া সে যা-ই হোক না কেন।


আরেকটি প্রয়োজনীয় ছোট টিপস দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে আধাগ্লাস ঈষদুষ্ণ পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নেবেন। এই শীতেও সবার ত্বক হবে লাবণ্যময় আর চুল হবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।


**************************
লেখকঃ ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড, বাড়ি-১৬, রোড-২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসকি এলাকা, ঢাকা।
দৈনিক নয়াদিগন্ত, ০৬ জানুয়ারী ২০০৮


সুন্দর চুলের জন্য

চুল কেরাটিন নামের একরকম প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। চুলে ৯৭ ভাগ প্রোটিন ও ৩ ভাগ পানি রয়েছে। চুলের যেটুকু আমরা দেখি সেটি মৃত কোষ। কারণ এতে অনুভূতিশীল কোনো কোষ নেই। একজন সুস্থ মানুষের মাথায় গড়ে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ চুল থাকে। প্রতিদিন ১০০টি পর্যন্ত চুল ঝড়ে পড়া স্বাভাবিক। এর থেকে বেশি চুল পড়লে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে চুল দ্রুত বড় হয় কিন্তু শীতকালে কম বড় হয়। একটি চুলের গড় আয়ু দুই-আট বছর। সুতরাং চুল কিছু না কিছু প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই ঝড়ে যায়।


চুলের কিউটিকন নষ্ট হয়ে গিয়ে চুলের কটেক্সের আঁশগুলো খুলে গেলে চুলের আগা ফেটে যায়। এতে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। মাথার তালুর সঠিক মাত্রায় রক্ত সঞ্চালনের জন্য চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ দরকার। নানারকম শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও সঠিক পরিচর্যার অভাবে চুলের স্বাস্থ্যও খারাপ হতে পারে। আপনার সুস্থতা প্রকাশ পায় আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য এবং চুলের স্বাস্থ্যের ভেতর দিয়ে। তাই সঠিক ডায়েট, প্রচুর ফলমূল, সঠিক পরিমাণে পানি পান করা, পর্যাপ্ত ব্যায়াম ও চিন্তামুক্ত ঘুম প্রয়োজন। এসব নিয়ম মেনে চললে চুলের সমস্যা সমাধান হওয়া উচিত। তবে খুশকি ও অন্যান্য সমস্যা যেমন চুল পড়া ও চুলের ডগা ফেটে যাওয়া রোধ করতে প্রয়োজন চুল ও তালু পরীক্ষা করা ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা।


চুলের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন। অনেক শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ চুল পড়া। তাই অবহেলা না করে এর সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। চুল খুব হালকা বা টাক হওয়ার আগেই চুল পড়া প্রতিরোধ করুন। সচেতন হোন।
চুল অতিরিক্ত পার্ম করা, অপর্যাপ্ত কন্ডিশনিং কিংবা অতিরিক্ত ব্রাশিংয়ের কারণে চুল ফেটে যেতে পারে। এ ছাড়া নিচুমানের চিরুনি বা ব্রাশ ব্যবহার এবং সঠিকভাবে চুল না আচড়ানোর জন্যও এই সমস্যায় পড়তে পারেন। এ ছাড়া চুল শুকাতে যেয়েও হেয়ার ড্রায়ারের কারণে চুলের আগা ফাটতে পারে।
খুশকির কারণেও চুল শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং চুলের আগা ফেটে যায়। চুলের আগা ফেটে গেলে খুবই অস্বাস্থ্যকর দেখায় এবং চুল বড় হয় না। এ ক্ষেত্রে খুশকির সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন।


কিছু ব্যক্তিগত কারণ যেমন হরমোনের তারতম্য, খারাপ স্বাস্থ্য, বিশ্রামের অভাব ইত্যাদির প্রভাবও চুলের ওপর পড়তে পারে। টেনশন, মানসিক যন্ত্রণা ঘুম না হওয়া বা কম হওয়া ইত্যাদির কারণেও চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে।


এ ছাড়া হেয়ার স্প্রে, জেল, মুজ ইত্যাদির অতি ব্যবহার এবং কৃত্রিম রঙ চুলের ক্ষতি করে।

************************
লেখকঃ ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড, বাড়ি-১৬, রোড-১৫ (নতুন), ২৮ (পুরাতন), ধানমন্ডি আবাসকি এলাকা, ঢাকা।
দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৩০শে ডিসেম্বর ২০০৭


চুলপড়া সমস্যা

কি খাবেন, কি খাবেন না

চুলপড়া সমস্যা যে শুধু শারীরিক সমস্যার কারণে হয় তাই নয়, যথাযথ পরিচর্যার অভাব এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের অভাবেও পুরুষ ও মহিলাদের চুল পড়ে। শারীরিক সমস্যা যেমনঃ থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, টাইফয়েডসহ কিছু রোগ-ব্যাধি, শরীরে ইনজেকশন, মাথায় খুশকি ও চর্মরোগ, দীর্ঘমেয়াদী এন্টিবায়োটিক সেবন, মহিলাদের হরমোন ট্যাবলেট সেবন, নারী-পুরুষের শরীরে একটি বিশেষ হরমোনের আধিক্য (এন্ড্রোজেনেটিকে এলোপেসিয়া), মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, হতাশা, পিতা-মাতার চুল পড়ার সমস্যা ইত্যাদি নানা কারণে চুল পড়তে পারে। এছাড়া বিবাহিত মহিলাদের সন্তান ধারণের সময়ও চুল পড়তে পারে। যদি চুল পড়ার প্রকৃত কারণ সনাক্ত করে চিকিৎসা ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে অবশ্যই চুলপড়া সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে চুলপড়া সমস্যার তাৎক্ষণিক কোন চিকিৎসা ও প্রতিকার নেই।

ক্ষেত্রবিশেষ চুলপড়া সমস্যা রোধের জন্য ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এছাড়া চুলপড়া রোধ ও নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রে হাতেগোনা মাত্র দুই-চারটি ওষুধ বের হয়েছে মাত্র।

মনে রাখতে হবে চুলপড়া সমস্যা রোধে শুধু ওষুধই একমাত্র পন্থা নয়। চুলের পরিচর্যা, স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপন এবং চুলবান্ধব আহারের মাধ্যমে চুলপড়া অনেকখানি রোধ করা যায়। আমি প্রায় ক্ষেত্রে লেখার সময় দুই-একটা উদাহরণ দিয়ে থাকি। আজো একটা উদাহরণ দেবো। আমি তিনজন সুপার স্পেশালিস্টের তত্ত্বাবধানে চুলপড়া সমস্যার চিকিৎসা ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সম্পর্কে খানিকটা জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পাই। আমি আগেও উল্লেখ করেছি এরা হলেন আমেরিকার বিখ্যাত হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডাঃ বার্নার্ড কোহেন ও ট্রাইকোলজিস্ট ডাঃ উলারি এবং সিঙ্গাপুরে ডাঃ লি। ডাঃ কোহেন বয়সে প্রায় আমার দেড়গুণ বড়। কিন্তু হ্নদয়ের দিক থেকে আমার চেয়েও কোমল। মায়ামির অপরূপ নৈসর্গিক অভিজাত এলাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে ডাঃ কোহেনের ডাক্তারী চেম্বার। অন্যরকম ব্যাপার। হোটেলটির একটি ফ্লোর ডাক্তারদের চেম্বার হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মায়ামি হার্ট ইনস্টিটিউটের একটি ফ্লোরে রয়েছে লেসার ও কসমেটিক সেন্টার। আমি আমেরিকার ডাঃ উলারি ও সিঙ্গাপুরের ডাঃ লি-এর প্রসঙ্গে আলোচনা আর একদিন করবো। শুধু বার্নার্ড কোহেনের একটি কথা বলতে চাই। ডাঃ কোহেন আমেরিকার প্রখ্যাত হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট এন্ড ডার্মার্টো সার্জন। ক্যারিয়ার শুরু করেন ডার্মাটোলজিস্ট হিসেবে। প্রতিদিন ৪/৫টার বেশি রোগী দেখেন না। প্রতিদিন দুইটি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করেন। এই হচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব বিশেষজ্ঞ ডাঃ কোহেন। আমাকে প্রায়ই বলতেন রোগীদের কখনো চুল নিয়ে কোন গ্যারান্টি দেবে না। চিকিৎসার পাশাপাশি চুলের পরিচর্যা, খাবার-দাবার এবং শৃঙ্খল জীবন-যাপনের পরামর্শ দেবে। ডাঃ কোহেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ডার্মাটোলজির ভলান্টারি প্রফেসর। আমি ডাঃ কোহেনের পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করি। আমি রোগীদের কখনো আশার বাণী শুনাই না। আমি চুলপড়া সমস্যাকে কোন রোগের পর্যায়ে বিবেচনা করতে চাই না। তবে চুলের পরিচর্যা এবং যথাযথ খাদ্য তালিকা অনুসরণ করেও বহুক্ষেত্রে চুলপড়া সমস্যা রোধ করা যায়। চুলের পরিচর্যার বিষয়টি আর একদিন আলোচনা করবো। আজ শুধু চুলের জন্য সহায়ক খাবার নিয়ে লিখতে চাই।

চুলের সহায়ক খাবার রান্নাঘর থেকেই শুরু করুন। মনে রাখতে হবে সবুজ শাক-সবজির মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস বা পুষ্টি উপাদান চুলের জন্য খুব উপকারী। শাক-সবজি কখনো অধিক ফুটিয়ে রান্না করবেন না। এতে ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। খাবারে লবণ কম খাবেন। লবণ মাথার ত্বকের কোষে পানি জমে থাকতে সাহায্য করে। মাথার ত্বকের কোষে পানি জমে থাকলে চুলের গোড়া নরম হয়ে অধিক চুল পড়তে সাহায্য করে।

গরীব-মধ্যবিত্তের চুলের সহায়ক খাবার হচ্ছে সবুজ শাক-সবজি। দেশীয় ফল-মূল, প্রচুর পানি পান, প্রোটিন যেমন- প্রতিদিন একটা করে ডিম খাওয়া ইত্যাদি। তবে সামর্থøবানরা আঙ্গুরের রস (গ্রেপ ফ্রুইট ককটেল), আলু, বাঁধাকপি, মিক্সড সালাদ, কলা, মুরগির মাংস, ডিম খেতে পারেন।

ইটিং ফর হেয়ার পলিসিঃ

যা খাবেনঃ কম চর্বিযুক্ত খাবার যেমন-কম চর্বির চিজ, মাছ, মুরগি, রেড মিট, ডিম, দই, বাদামী চালের ভাত, বাদাম, তাজা ফল ও শাক-সবজি, গ্রীন সালাদ, হোলমিল ব্রেড এবং সিরিয়াল, মাখন নেই এমন দুগ্ধ ইত্যাদি।

যা খাবেন নাঃ আইসক্রিম, পেস্ট্রি কেক, লবণ, ফাস্টফুড, জাংক ফুড, চিনি, পশুর চর্বি, বাটার, ক্রিম, অধিক চর্বিযুক্ত চিজ, হুয়াইট ব্রেড ও ময়দা, ভাজা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকলেট এবং হোল মিল্ক ইত্যাদি। পাশাপাশি ধূমপান সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে।

**************************
লেখকঃ ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম
চুলপড়া, যৌন সমস্যা ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেজার এন্ড কসমেটিক্স সার্জন চেম্বারঃ লেজার স্কিন সেন্টার
বাড়ী নং-২২/এ, রোড-২, ধানমন্ডি, ঢাকা।
দৈনিক নয়াদিগন্ত, ০২ ডিসেম্বর ২০০৭


স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য

চুল নিয়ে আজকাল অনেকেরই ভাবনার অন্ত নেই। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর চুল সবারই কাম্য। আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সমান ভারী চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল বলা যায়। এ ছাড়া চকচকে কালো চুল ও মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকতে হবে।
ষ স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য। সঠিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে প্রচুর শাকসবজি, ফল ও সালাদ। খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের অভাবে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়, চুল ঝরে পড়ে।

-সঠিক পরিমাণে পানি পান করলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বেরিয়ে যায়।
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
- মাথার ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার রাখাও প্রয়োজন।

প্রোটিন এবং আপনার চুল
প্রোটিনের অভাবে চুলের রঙ প্রথমে নষ্ট হয়ে যায়। চুল লালচে বাদামি হতে থাকে। পরে চুল ঝরে যায় এবং চুলের আগা ফাটতে থাকে। কেরাটিনের অভাবে চুল ফেটে যায়। খাদ্য তালিকায় মাছ, গোশত, ডিম, দুধ, ডাল, দই, পনির ইত্যাদি থাকা জরুরি। এতে কেরাটিন তৈরিতে সহায়তা হয়।

ভিটামিন এবং আপনার চুল
ভিটামিন ‘এ’র অভাবে চুল রুক্ষ ও প্রাণহীন হয়ে ওঠে। আবার অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’র জন্য চুল ঝরে পড়তে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’র জন্য অল্প অল্প করে চুল জায়গায় জায়গায় উঠে গিয়ে টাক পড়ে যায়। খাদ্য তালিকায় দুধ, গাজর, মুলা, সবুজ শাকসবজি থাকা প্রয়োজন। ভিটামিন ‘সি’র অভাবে চুল খসখসে শুষ্ক হয়ে ওঠে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তাই লেবুজাতীয় ফল, কমলালেবু, মোসম্বী ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন।

ভিটামিন ‘বি’ চুলকে চকচকে ও ঘন করে তোলে। শস্যদানা, দুধ, ডিম, কলা, বাদাম, কলিজা ও ডালে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’। প্রতিদিন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে এবং চুল ঝরবে না।
স্নেহপদার্থ এবং আপনার চুল

চুল তৈলাক্ত হলে প্রাণীজ চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করুন। উদ্ভিজ্জ তেল খেতে পারেন। সম্পৃক্ত চর্বি গরু, খাসির গোশত কম খাবেন। দুধ বা ননী তোলা দুধ, পনির ও দই খেতে পারেন।

স্বাস্থ্যহীন চুলের কারণ
ষ সুষম খাবার না খাওয়া স্বাস্থ্যহীন চুলের প্রধান কারণ। খাদ্য তালিকা সঠিক না হওয়ার কারণে চুল ঝরে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খাওয়া ও ভিটামিন গ্রহণ করা প্রয়োজন।

- দীর্ঘ সময় হেলমেট, টুপি ইত্যাদি পরে থাকা,
- চুলে নানা কেমিক্যাল ডাই ব্যবহার করা,
- সঠিকভাবে চুল পরিষ্কার না করা,
- খুশকি ও অন্যান্য রোগ,
- অতিরিক্ত রোদে বের হওয়া এবং চুল ভেজা থাকা,
- শারীরিক অসুখ-বিসুখ, মানসিক চাপ,
- ঘুম না হওয়া এবং হরমোনের তারতম্যজনিত কারণ,

চুল স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়লে এবং চুল ঝরে পড়লে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। সুষম আহার, চুলের সঠিক পরিচর্যা এবং প্রয়োজনে কিছু ওষুধের ব্যবহারে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।


লেখকঃ ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড, বাড়ি-১৬, রোড-১৫ (নতুন), ২৮ (পুরাতন), ধানমন্ডি আবাসকি এলাকা, ঢাকা।
দৈনিক নয়াদিগন্ত, ১১ নভেম্বর ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত।


মেয়েদের মুখে অবাঞ্ছিত লোম: লেজার চিকিৎসা কতটা কার্যকর ?
কসমেটিক: ডার্মাটোলজি-১৪

প্রতিটি নারী-পুরুষের শরীরে কম-বেশি লোম রয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝে মাঝে এই লোম সমস্যা নিদারুণ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। যদি মেয়েদের মুখে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক লোম পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক সমস্যায় রূপ নেয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করে। আমি শুরুতেই বলেছি নারী-পুরুষের শরীরে লোম তৈরি হওয়ার জন্য এক ধরনের হরমোন দায়ী। প্রত্যেক নারী ও পুরুষের শরীরে টেসটেসটেরন নামক এক ধরনের হরমোন রয়েছে। এই টেসটেসটেরন হরমোনকে পুরুষ হরমোন নামে অভিহিত করা হয়। পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদের শরীরেও এই টেসটেসটেরন হরমোন সামান্য পরিমাণ থাকে। কিন্তু মেয়েদের শরীরে এই হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকলে অথবা হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে মেয়েদের শরীরেও পুরুষের মত অধিক লোম গজাতে পারে। ডাক্তারী ভাষায় মেয়েদের এই শারীরিক সমস্যাটিকে ‘হারসুটিজম’ বলা হয়। যদিও এই ‘হারসুটিজম’ সমস্যাটি একটা হরমোনজনিত সমস্যা তবুও চিকিৎসার পাশাপাশি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেয়েদের শরীরের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণে লেজার চিকিৎসা এক বৈপ্লবিক সুযোগ এনে দিয়েছে। লেজারের মাধ্যমে নারী-পুরুষের শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করা যায়। সাধারণত মহিলাদের আপার লিপ বা ঠোঁটের উপরের অংশে ও মুখের অন্যান্য স্থানে অবাঞ্ছিত লোম গজাতে পারে। অতীতে এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে দেশে লেজার চিকিৎসা ছিল না। বর্তমানে একাধিক লেজার সেন্টারে এ ধরনের সমস্যার চিকিৎসা হচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে লেজারের মাধ্যমে মেয়েদের মুখের লোম অপসারণ কোন স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘হেয়ার রিডাকশন’। অনেকে ভুল তথ্য দিয়ে রোগীদের প্রলুব্ধ ও প্রতারিত করে আসছে। যারা লেজারের মাধ্যমে মুখের লোম অপসারণ করতে চান তাদের অবশ্যই সংশিস্নষ্ট লেজার সেন্টারের বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চাওয়া উচিত হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে লেজার-এর মাধ্যমে শরীরের লোম অপসারণ করলে পুনরায় লোম গজাবে কি না। কোনভাবেই লেজার বিশেষজ্ঞ বা স্কিন বিশেষজ্ঞের কাছে এ প্রশ্নের জবাব না পাওয়া পর্যন্ত লেজার-এর মাধ্যমে লোম অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও সিঙ্গাপুরের একাধিক লেজার সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় কথনও বিশেষজ্ঞদের বলতে শুনিনি লেজারের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে মুখের লোম বা শরীরের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করা যায়। তবে একথাটি অস্বীকার করা যাবে না যে লেজারের মাধ্যমে হেয়ার অপসারণের পর দীর্ঘদিন আর লোম গজায় না। অনেক ক্ষেত্রে লেজারের মাধ্যমে মুখের অবাঞ্ছিত লোম অপসাণের পরও তিন মাস, ছয় মাস বা এক বছর পর আবার কিছু কিছু লোম গজাতে পারে। এ ক্ষেত্রে পুনরায় দু’/একবার লেজার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। তবে লেজার করার পর শরীরের উক্ত স্থানে লোম গজানোর মাত্রা থাকে অনেক কম। সাধারণতঃ লেজারের মাধ্যমে অবাঞ্ছিত লোম অপসারণের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে একবার করে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাতটি সেশন করতে হয়। অনেকে ক্ষেত্রে দশ থেকে পনের সেশন পর্যন্ত লাগাতে পারে।

আমি পূর্বেই বলেছি মেয়েদের মুখের অবাঞ্ছিত লোম একটি হরমোনজনিত সমস্যা এবং এই রোগটির নাম ‘হারসুটিজম’। অনেক লেজার বিশেষজ্ঞ লেজারের মাধ্যমে অবাঞ্ছিত লোম অপসারণের পাশাপাশি তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। লেজার এবং ওষুধ একসঙ্গে অধিক কার্যকর। তবে হরমোনজনিত চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবশ্যই রোগীকে যে কোন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

তাই শরীরের অবাঞ্ছিত বা অধিক লোম অপসারণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো করে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এ কথাটি সব সময় মনে রাখতে হবে লেজার কোন স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। শুধু মুখের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ নয়, লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে মুখের লাবণ্যতা তৈরি, ব্রণ চিকিৎসা, দাগ তোলা কোনটিই স্থায়ী নয়। এ বিষয়টি পরে আলোচনা করব। তবে যারা লেজারের মাধ্যমে মুখের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করতে চান তাদের প্রথমে উচিত সংশিস্নষ্ট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মেয়েদের মুখে অবাঞ্ছিত লোম গজানোর কারণ নির্ণয়। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত আপনি লেজার করবেন কিনা। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে লেজার কোনভাবেই লোম সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। সংশিস্নষ্ট বিশেষজ্ঞদেরও রোগীদের এই তথ্যটি জানানো উচিত। তথ্য গোপন করে রোগীর কাছ থেকে বিপুল অর্থ আদায় করা এক ধরনের অপরাধ। মোট কথা লেজার চিকিৎসার ভাল-মন্দ জেনে যিনি লেজার চিকিৎসায় উদ্বুদ্ধ হবেন কেবল তারই লেজার করা উচিত।

ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম
চুলপড়া, যৌন সমস্যা ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেজার এন্ড কসমেটিক্স সার্জন বাংলাদেশ লেজার স্কিন সেন্টার,
বাড়ী নং-৩৯, রোড-২, আম্বালা কমপ্লেক্স, ধানমন্ডি, ঢাকা।
দৈনিক ইত্তেফাক. ২৮ মার্চ ২০০৯।


নারীদেহে অবাঞ্ছিত লোম

নারীদেহে অবাঞ্ছিত লোম কিছুতেই কাম্য নয়। কারণ এতে নারীর দৈহিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় এবং এটি এক অসহ্য যন্ত্রণার বিষয় হয়ে ওঠে।

হারসুটিজমঃ মেয়েদের মুখে, বুকে ও নাভীতে অবাঞ্ছিত লোম সৃষ্টির ডাক্তারি নাম হলো হারসুটিজম। রোগটির আরো কিছু লক্ষণ হলো মাসিকচক্রে অনিয়ম, স্তনদ্বয় ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে যাওয়া, গলার স্বর ভারী হওয়া এবং পুরুষসঙ্গীর প্রতি ক্রমান্বয়ে আকর্ষণ কমে যাওয়া। কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে বন্ধ্যা হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়।

বিস্ময়কর কসমেটিক সার্জারিঃ এক্ষেত্রে বিস্ময়কর এক কসমেটিক সার্জারির নাম লেজার। নিজস্ব আলোকরশ্মির মাধ্যমে এটি নারীদেহের অবাঞ্ছিত লোমগুলো ত্বকের কোনো ক্ষতি না করে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই দুর করে দেয়। এজন্য প্রয়োজন ১ থেকে ৪ সেশন চিকিৎসা।

ল্যাব-পরীক্ষাঃ সঠিক কারণগুলো শনাক্ত করে লেজার সার্জারির সঙ্গে মুখে খাবার ওষুধ দিয়ে রোগটি স্হায়ীভাবে নিরাময় করা সম্ভব। কারণগুলো শনাক্তকরণের জন্য বিশেষ বিশেষ পরীক্ষাগুলো হলোঃ

* রক্তের সুগার, ভিডিআরএল, টিপিএইচএ এবং এইচবিএসএজি পরীক্ষা
* রক্তের হরমোন এনালাইসিস
* আল্ট্রাসনোগ্রাম অফ হেপাটো-বিলিয়ারি সিষ্টেম
উপসংহারঃ রোগটি সারাতে লেজার হচ্ছে প্রায় শতভাগ সফল। তাই একজন দক্ষ ত্বক বিশেষজ্ঞ ও কসমেটিক সার্জনের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে।



লেখকঃ ডা. এ কে এম মাহমুদুল হক (খায়ের)
ত্বক, যৌন ও এলার্জি বিশেষজ্ঞ এবং কসমেটিক সার্জন, কনসালট্যান্ট, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকাদৈনিক আমারদেশ, ২৪ ডিসেম্বর ২০০৭


সন্তান জন্মের পর মায়ের চুল পড়া ও প্রতিকার

সাধারণত সন্তান জন্মদানের পরে মায়েদের প্রচুর চুল পড়ে।
কেন এ সময় চুল ওঠে?
গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের মাত্রা থাকে অনেক বেশি। ডিম্বাশয় প্লাসেন্টা এগুলো থেকে অনেক হরমোন বের হয়। সন্তানের জন্মের পর এ হরমোনের মাত্রা একেবারে হঠাৎ করে কমে যায়, তার ফলস্বরূপ চুল ওঠে।
ব্রেস্টফিডিংয়ের সাথে চুল ওঠার সম্পর্ক আছে কি?
ব্রেস্টফিডিংয়ের সাথে চুল ওঠার কোনো সম্পর্ক নেই। ব্রেস্টফিডিং মা ও শিশুর মধ্যে এক সুন্দর মেলবন্ধন ঘটায়, ফলে মায়ের মনে থাকে এক প্রশান্তি, তাতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হওয়ারই কথা।
নরমাল ডেলিভারি ও সিজারিয়ান কোনটিতে বেশি চুল পড়ার আশঙ্কা থাকে?
নরমাল ডেলিভারি একটি স্বাভাবিক ঘটনা, তাই হরমোনের মাত্রা কমে স্বাভাবিকভাবে আর সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের পর হরমোনের মাত্রা হঠাৎ করে কমে যায়। তাই সিজারের পর চুল পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
মায়ের অনিদ্রা কি চুল পড়ার কারণ?
অবশ্যই। শিশুকে ফিডিং করাতে রাতে বারবার মাকে উঠতে হয়, সারা দিনেও শিশু সামলাতে মা হিমশিম খায়, নিজের দিকে খেয়ালই নেই, আমাদের দেশের বেশিরভাগ পরিবারেই সদ্যপ্রসূতির তেমন যত্ন ও খাওয়াদাওয়া হয় না।
এ চুল গজাবার কোনো ওষুধ আছে কি?
ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসক মাথায় স্টেরয়েড ড্রপ ম্যাসাজ করতে বলেন। তাতে খানিকটা কাজ হয়। তা ছাড়া মাথায় ভালোভাবে ম্যাসাজের জন্য রক্তসঞ্চালন বাড়ে­ তাতে চুল হয়।
সন্তান হওয়ার কত দিন পর পর্যন্ত চুল পড়ে?
সাধারণত দুই থেকে তিন মাস। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া যত্ন পেলে এই চুল আবার স্বাভাবিকভাবে গজিয়ে যায়।
চুলের জন্য এ সময় কী কী বিশেষ যত্নের দরকার?
সন্তান পেটে থাকাকালীন এই যত্ন শুরু হওয়া দরকার। গর্ভাবস্থা ও বুকের দুধ খাওয়ানো­ এ দুই অবস্থাতেই মেয়েদের স্বাভাবিক প্রয়োজনীয় ক্যালরির ওপরে আরো ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালরি অতিরিক্ত প্রয়োজন হয়। তাই প্রোটিন, কার্বনাইড্রেট, ফ্যাট সবই ঠিকমতো খেতে হবে। একবারে না পারলে বারে বারে অল্প অল্প করে খাওয়া দরকার। ফল, দুধ খেতে হবে পর্যাপ্ত। আমাদের দেশে সন্তান হওয়ার পর দুধসাবু খাওয়ার যে প্রথা প্রচলিত আছে তা ক্যালরির জোগান দেয়।
খুব বেশি তেলমসলা দেয়া খাবার বা অতিরিক্ত ভাজাভুজিও না খাওয়াই যুক্তিযুক্ত।
অ্যানিমিয়া একটি বড় সমস্যা। আমাদের দেশের ৮০ শতাংশ মায়ের হিমোগ্লোবিন ১০ গ্রাম শতাংশের নিচে। এর চিকিৎসা অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী করতে হবে। চিকিৎসা মানে ইচ্ছেমতো আয়রন বড়ি বা ক্যাপসুল খাওয়া নয়। কোন ওষুধ কার ক্ষেত্রে কার্যকর তা একমাত্র চিকিৎসই বলতে পারবেন।
এ ছাড়া দেয়া হয় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।
দুপুরের দিকে শিশুকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে যদি বাড়ির অন্য কোনো আত্মীয়া বা পরিচারিকার কাছে রেখে মা নিজে অন্তত দু-তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়। দরকার হলে এই সময় শিশুকে খাওয়ানোর জন্য ব্রেস্টমিল্ক বার করে সঞ্চয় করে রেখে দেয়া যেতে পারে।
সপ্তাহে দু’দিন ননমেডিকেটেড শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ঘষে ফেলুন। রাতে শোয়ার আগে মাথায় লাইট হেয়ার অয়েল তুলোয় ভিজিয়ে নিয়ে ম্যাসাজ করুন অন্তত পাঁচ মিনিট।
সন্তান জন্মদানের পরে মায়ের শরীর-স্বাস্থ্যের সাথে চুল ও ত্বকের পূর্ণাঙ্গ পরিচর্যা খুবই দরকার। অনেক সময় সন্তান জন্মদানের পরে মা তার স্বাভাবিক জৌলুশ হারিয়ে ফেলেন। চুলের প্রকৃত যত্ন না নেয়ার ফলে মায়ের মাথায় টাক পর্যন্ত দেখা যেতে পারে। তাই চুল পড়াকে অবহেলা না করে চিকিৎকের শরণাপন্ন হোন ও চিকিৎসা নিন।

ডা. ওয়ানাইজা
যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৩০ মার্চ ২০০৮


চুল পাকা রোগ

অনাদিকাল থেকে মানুষ চুলের পরিচর্যা করে আসছে। সুন্দর চুলের জন্য মানুষের প্রচেষ্টার বিরাম নেই। কিন্তু অনেক সময় তাকে হতাশ করে দিয়ে সুন্দর চুলগুলো পাকতে শুরু করে। প্রকৃতির নিয়মে একটি নির্দিষ্ট বয়সে মানুষের চুল পাকে, কিন্তু কখনো কখনো অল্প বয়সেও কারো কারো চুল পাকতে দেখা যায়। তখন দুঃশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। সমীক্ষায় দেখা গেছে ২৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ২৫ জনের চুলে পাক ধরে। পরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পাকার সংখ্যা আরো বেড়ে পঞ্চাশে দাঁড়ায়। এই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যাটি দেখা দেয়ার কারণ কী?

আমাদের ত্বকে মেলানোসাইট নামক একধরনের কোষ থাকে যা মেলানিন উৎপাদন করে। যাদের কম মেলানিন উৎপাদন হয় তাদের রঙ সাদা হয় এবং বেশি উৎপাদন হলে রঙ কালো হয়। চুলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যদি কোনো কারণে চুলের গোড়ার মেলানোসাইট কোষ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় তাহলে বন্ধ হয়ে যায় মেলানিনের উৎপাদন। ফলে চুলের রঙ সাদা হয়ে যায় এবং আমরা সেটাকে চুল পাকা বলি। যেকোনো বয়সেই এটা ঘটতে পারে। মেলানোসাইট কোষ কেন নিষ্ক্রিয় হচ্ছে এ ব্যাপারে অনেক গবেষণা হয়েছে। দেখা গেছে বংশগত কারণে অনেকের মধ্যে এ সমস্যাটি ঘটছে। অল্প বয়সে যাদের চুল পাকে তাদের কারো কারো মধ্যে অটোইমিউন ডিজিজে’র কারণে মেলানোসাইট কোষ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। ফলে চুলে মেলানিন না পৌঁছানোর কারণে চুল পেকে যাচ্ছে। এই অটোইমিউন ডিজিজে ত্বকের মেলানোসাইটের বিরুদ্ধে তৈরি হয় এন্টি মেলানোসাইট এন্টিবডি যা মেলানোসাইট কোষকে ধ্বংস করে দেয়। এ ছাড়া গবেষকরা খুব বেশি জ্বর, দীর্ঘমেয়াদি কোনো অসুখ এবং মানসিক দুঃশ্চিন্তাকে অল্পবয়সে চুল পাকার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

অল্প বয়সে কিংবা বেশি বয়সে চুল পাকার ব্যাপারটি হঠাৎ করে ঘটে না। প্রথমে কয়েকটি চুল পাকতে শুরু করে­ পরে ধীরে ধীরে অন্যান্য চুল পাকে।

বংশজাত কারণ ছাড়া আর সেসব কারণে চুল পাকে­ চুলের প্রধান পুষ্টি প্রোটিন ও ভিটামিন। এই পুষ্টির অভাবে চুল পাকতে পারে। শরীরে যখনই প্রোটিন কিংবা ভিটামিনের তীব্র অভাব ঘটে তখনই চুলের পরিবর্তন চোখে পড়ে। প্রোটিনের অভাবে চুল শুষ্ক, পাতলা, ভঙ্গুর ও বিবর্ণ হয়।

শিশুদের ক্ষেত্রে ম্যারাসমাস ও কোয়াশিওরকর নামক দু’টি রোগে চুল পাকা দেখা দেয়। হৃদরোগীদের চুল খুব দ্রুত পেকে যায়, বিশেষ করে যারা উচ্চরক্তচাপ কিংবা করোনারি হার্টডিজিজে ভুগছেন তাদের চুল পেকে যাওয়ার ঘটনা বেশি। এ ছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থিতে সমস্যা দেখা দিলে চুল পাকে। প্রোজেরিয়া নামক রোগে ১২ বছরের আগেই শিশুর চুল পাকতে শুরু করে।
রথম্যান থমসন সিনড্রোম এবং ডিসট্রফিক মায়েরাটোনিয়া রোগেও চুল খুব তাড়াতাড়ি পেকে যায়। শরীরে ভিটামিন ‘বি’ ১২-এর অভাবেও চুল পাকে।

এ ছাড়া বিভিন্ন চর্মরোগে বিশেষ করে সোরিয়াসিস ও শ্বেতীরোগে চুল পাকতে পারে।

চুল পাকলে কী করণীয়?
অনেকের ধারণা চুলে নিয়মিত তেল না মাখলে চুল পেকে যায়। কিন্তু ধারণাটি ভ্রান্ত। চুল পাকার সাথে চুলে তেল দেয়া না দেয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। সত্যিকার অর্থে পাকা চুল কালো করার স্থায়ী কোনো উপায় নেই। একমাত্র কলপ ব্যবহার করে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। তবে যেসব রোগের জন্য চুল পেকে যায়­ যদি রোগটি নির্ণয় করা সম্ভব হয় এবং রোগের চিকিৎসা করা যায় তাহলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাকা চুল কালো হয়ে ওঠে। এ ছাড়া পাকা চুল কালো করার কোনো ওষুধ আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। কলপ মাখার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারো কারো ক্ষেত্রে কলপে এলার্জি হতে পারে। সেজন্য কলপ মাখার আগে ত্বকে একটু ঘষে নিয়ে, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যদি এলার্জি না দেখা দেয়, তবে চুলে মাখা যেতে পারে। কিছু কিছু কোম্পানি চুল কালো করার তেল বা ওষুধের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ওই সব তেল বা ওষুধ চুলে মাখলে চুলে কালো একটি ক্ষণস্থায়ী প্রলেপ পড়ে, কিন্তু তা স্থায়ী কোনো সমাধান দিতে পারে না। বরং ওই সব তেল বা ওষুধ চুলে মাখার কারণে মাথার ত্বকে অনেক সময় এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। তাই চুলে পাক ধরলে প্রথমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে চুল পাকার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা উচিত।

ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৯ মার্চ ২০০৮


নখের অসুখ

নখ ত্বকেরই অংশ, নখ প্রেস্টিন দিয়ে তৈরি। নখ প্রতিদিন তৈরি হয়। প্রতি মাসে ১/৮ ইঞ্চি নখ বড় হয়। পায়ের নখ হাতের নখের তুলনায় ধীরে বড় হয়। নখ সুন্দর রাখার জন্য নখের সঠিক যত্নও প্রয়োজন।

নখের নানারকম অসুখ হতে পারে। নানা অসুখে নখের পরিবর্তন আসতে পারে। শারীরিক নানা রকম অসুখ যেমন ফুসফুস বা হার্টের অসুখ, রক্তস্বল্পতা ইত্যাদি নানা কারণে নখের পরিবর্তন হয়।

নখের সাদা দাগঃ কোনো রকম ফাঙ্গাসের আক্রমণে নখে সাদা দাগ হতে পারে। এ ছাড়া নখের পাশের ত্বকে কোনো আক্রমণের কারণে নখে সাদা দাগ হতে পারে। মাস খানেকের মাঝে সাদা দাগ আপনা আপনি চলে না গেলে ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। নখের ভেফু যাওয়াঃ শারীরিক অসুখ এবং অনেক বাহ্যিক কারণে নখ ভেঙে যেতে পারে। খুব বেশি সাবান ব্যবহার, নেল পলিশ ব্যবহার ইত্যাদি কারণে নখ ভাঙতে পারে।
ভেঙে যাওয়া নখের যত্নঃ
অতিরিক্ত সাবান, নেলপলিশ, ব্যবহার করবেন না।
সাবান ব্যবহারের করে কোল্ড ক্রিম ব্যবহার করবেন।
ল্যাকটিক এসিড ও ইউরিয়াযুক্ত ক্রিম প্রতি রাতে ব্যবহার করবেন।
১৫ দিন অন্তর হালকা গরম অলিভ তেলে ১৫ মিনিট আঙুল ডুবিয়ে রাখুন। এ ছাড়া প্রতি রাতে হাতের নখে ও আঙুলে অলিভ তেল মালিশ করম্নন।
নেল পলিশ এবং রিমুভার ব্যবহারের পরে আঙুল ও নখে অলিভ তেল লাগাবেন।
প্রচুর প্রোটিনযুক্ত খাবার খাবেন, প্রতিদিন দুধ বা দই খাবেন।
ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাবেন।

পায়ের নখ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়াঃ এটা খুব সাধারণ সমস্যা। নখ বড় হওয়ার সময় ভেতরের দিকে ঢুকে গেলে এমন হয়। এতে করে ওই জায়গা ফুলে যায়। লাল হয়ে মরেও প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ইনফেকশনের কারণে এমন হয়। প্রতিকার ও প্রতিরোধঃ নখ কাটার সময় লক্ষ্য করে দু্‌ই পাশের নখ কাটবেন।
যথাযথ জুতা পরবেন।
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট নখের কোণে লাগাবেন।
নখের কোণ যদি ব্যথা করে বা ফুলে যায় তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।


ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৬ এপ্রিল ২০০৮

Labels: , , , ,