Youngali Story, History, Solution, Picture, Song, Video, Scandels and Romance

Youngali Story, History, Solution, Picture, Song, Video, Romance......any thing for your one friend.

Tuesday, November 10, 2009

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি


আমি চেষ্টা করেছি এখানে লিওনার্দোর নানা অজানা কাহিনী প্লাস বেশ কিছু দুস্প্রাপ্য ছবির বর্ণনা দিতে। আমি আত্ববিশ্বাসী যে, এই পোস্টটা পড়লে আপনারা লিওনার্দো দা ভিঞ্চির জীবন ও তার আকাঁনো ছবিগুলো সম্পর্কে পরিস্কার একটা ধারনা পাবেন। আর কথা বাড়াবো না। মূল বক্তব্য শুরু করি।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চির (পূর্ণ নাম Leonardo di ser Piero da Vinci) জন্ম ফ্লোরেন্সের অদূরবতী ভিঞ্চি নগরের এক গ্রামে, ১৪৫২ সালের ১৫ই এপ্রিল। তাঁর শৈল্পিক মেধার বিকাশ ঘটে খুব অল্প বয়সেই। আনুমানিক ১৪৬৯ সালে রেনেসাঁসের অপর বিশিষ্ট শিল্পী ও ভাস্কর আন্দ্রেয়া ভেরোচ্চিয়োর কাছে ছবি আঁকায় ভিঞ্চির শিক্ষানবিশ জীবনের সূচনা। এই শিক্ষাগুরুর অধীনেই তিনি ১৪৭৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে, বিশেষত চিত্রাঙ্কনে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। ১৪৭২ সালে তিনি চিত্রশিল্পীদের গীল্ডে ভর্তি হন এবং এই সময় থেকেই তাঁর চিত্রকর জীবনের সূচনা হয়।

১৪৭৮ সাল থেকে ১৫১৬-১৭ এবং ১৫১৯ সাল অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রসারিত ও বিভিন্ন পর্বে বিভক্ত, এক দীর্ঘ ও অক্লান্ত কর্ম সাধনার জীবন তাঁর। গীর্জা ও রাজপ্রাসাদের দেয়ালে চিত্রাঙ্কন এবং রাজকীয় ব্যাক্তিবর্গের ভাস্কর্য নির্মাণের পাশাপাশি বেসামরিক ও সামরিক প্রকৌশলী হিসাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান জ্ঞানের প্রয়োগ, অঙ্গব্যাবচ্ছেদবিদ্যা, জীববিদ্যা, গণিত ও পদার্থবিদ্যার মত বিচিত্র সব বিষয়ের ক্ষেত্রেতিনি গভীর অনুসন্ধিৎসা প্রদর্শন করেন এবং মৌলিক উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দেন।

আনুমানিক ১৪৮২ সালে তিনি মিলান গমন করেন এবং সেখানে অবস্থান কালে তাঁর বিখ্যাত দেয়াল চিত্র দ্য লাস্ট সাপার অঙ্কন করেন। আনুমানিক ১৫০০ সালে তিনি ফ্লোরেন্স ফিরে আসেন এবং সামরিক বিভাগে প্রকৌশলী পদে নিয়োগ লাভ করেন। এই সময়েই তিনি তাঁর বিশ্বখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসা অঙ্কন করেন। জীবনের শেষ কাল তিনি ফ্রান্সএ কাটান। মারা যান মে ২, ১৫১৯ এ।

তেইশে এপ্রিল ১৫১৯ সালে বিখ্যাত শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি যখন মারা যান, তখন তার সার্বক্ষনিক সাথী এবং ছাত্র শিল্পী ফ্রান্সেস্কো মেলজি তার সহায় সম্পত্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকারের রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেন। শোকে কাতর মেলজি লিওনার্দোর সমাধিস্থল ফ্রান্সের ক্লাউক্সে কাটিয়ে দেন কয়েক মাস। শোক কিছুটা কমে আসার পর তিনি তার চাকর বাকরদের আদেশ করেন সব কিছু গুছিয়ে দেশে ফেরার জন্য। ঘোড়ায় টানা গাড়িতে তোলা হতে থাকে লিওনার্দোর সব অস্থাবর সম্পত্তি। বাক্সের পর বাক্স ভর্তি কাগজপত্র, কাঠের এবং ধাতুর তৈরি মডেল, পেইন্টিং সহ আরো অসংখ্য জিনিষপত্র।

তবে ওই সমস্ত জিনিষের মধ্যে সবচেয়ে অমূল্য যা ছিল তা হচ্ছে প্রায় ১৩,০০০ পৃষ্ঠার নোট। বেশিরভাগই বাঁধা ছিল দড়ি বা ফিতা দিয়ে অত্যন্ত অনাদরে। কিছু কিছু ছিল চামড়ায় মোড়ানো নোটবুক বা ফোল্ডারের ভিতরে। এগুলোকে মেলজি নিয়ে যান তার পূর্বপুরুষের ভিটা মিলানের কাছাকাছি অবস্থিত ভ্যাপ্রিওতে। মেলজির ইচ্ছা ছিল লিওনার্দোর সারা জীবনের কাজ, সিজ টাওয়ার গঠন থেকে পাখির উড়া, কিডনীর আভ্যন্তরিন কাজ থেকে চাঁদের খাদ পর্যন্ত বিষয় নিয়ে তার বিচিত্র বিষয়ের চিন্তা-ভাবনাকে ক্যাটালগ করা।

শুরুর দিকে ব্যক্তিগত কিছু ব্যস্ততার কারণে তা আর হয়ে উঠে না। বছর কয়েক পরে মেলজি লিওনার্দোর কাজগুলোকে গোছানো শুরু করেন। তবে খুব একটা সহজ ছিল না সেই কাজ। দুই দুই জন সাহায্যকারী থাকা সত্ত্বেও এই কাজ তার জন্য শেষ করা প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। কাজ এগোয় খুব সামান্যই । অনেকদিন পরে শুধুমাত্র লিওনার্দোর পেইন্টিং এর একটি অসম্পূর্ণ ভল্যুম শেষ পর্যন্ত ভ্যাটিক্যান লাইব্রেরীতে পৌঁছায় এবং ১৬৫১ সালে তা অত্যন্ত নিস্প্রভ এবং বিকৃতভাবে লিওনার্দোর Trattato della pittura বা Treatise on Painting নামে প্রকাশিত হয়।

১৫৭০ সালে মেলজি মারা যাবার পর তার একমাত্র সন্তান ওরাজিও সম্পুর্ণ সংগ্রহের উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হন। কিন্তু ওরাজিওর তার বাবার মত লিওনার্দো বা তার কাজের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। বরং ঘর-বাড়ীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য সে সব ‘অপ্রয়োজনীয়’ কাগজপত্র জোগাড় করে গাদা করে ফেলে রেখেছিল ভাগাড়ে। এবং এক্ষেত্রে যা হওয়ার তাই হয়েছিল। কিছু দিনের মধ্যেই ওরাজিও বেমালুম ভুলে গিয়েছিল ওই সব "ফালতু" কাগজপত্রের কথা।
সেই সময় ওরাজিওর চেয়ে অন্যেরাই বরং ওই সব "ফালতু" কাগজপত্রের মূল্য সম্পর্কে বেশি সচেতন ছিল। ওরাজিও'র বুদ্ধিমান শিক্ষক লিলিও গাভার্ডি ওরাজিওকে পটিয়ে পাটিয়ে কমপক্ষে তেরো খণ্ড নোটবুক বাগিয়ে নেন এবং তা বিক্রি করে দেন টাসকানির গ্র্যান্ড ডিউকের কাছে। এর কয়েক বছর পরে একজন মিলানবাসী পরোপকারী সন্ন্যাসী গ্র্যান্ড ডিউককে রাজী করান পান্ডুলিপিগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য। কিন্তু সন্ন্যাসী যখন সব পান্ডুলিপি নিয়ে ওরাজিওর কাছে আসেন ফেরত দিতে, তখন ওরাজিও বেশ বিরক্ত হয়েই সন্ন্যাসীকে বলে যে এই সমস্ত ‘বাজে কাগজপত্র’ তার বাড়িতে আরো অনেক আছে। আরো আবর্জনা বাড়ানোর কোন ইচ্ছা তার আর নেই, বরং সন্ন্যাসী ইচ্ছা করলে ওগুলো নিজেই রেখে দিতে পারেন।

ক্রমে ক্রমে কথা চাউর হয়ে যায় যে, ওরাজিও মেলজির কাছে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নোট এবং পেইন্টিং এর বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। ট্রেজার হান্টাররা খুব শিঘ্রিই ঝাঁপিয়ে পড়ে ভ্যাপ্রিওর উপর এবং ওরাজিওর উদারতায় তাদের প্রত্যেকেই কোন না কোন নোটবুকের কিছু না কিছু আলগা পৃষ্ঠা নিয়ে বাড়ী ফিরে যেতে সমর্থ হয়।

ফ্রান্সেস্কো মেলজির এতো সতর্কতা সত্ত্বেও তার গুণধর পুত্রের কল্যানে কাজের কাজ কিছুই হলো না। বরং ভিঞ্চির অমূল্য নোট ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো অজানা অচেনা অসংখ্য লোকের হাতে। কিছু সংগ্রহ যেয়ে হাজির হল উইন্ডজরের ব্রিটিশ রাজকীয় পরিবারে। বাকীগুলো অভিজাত ব্যাক্তিবর্গ এবং গীর্জার পাদ্রীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লো ইটালী, ফ্রান্স এবং স্পেনের লাইব্রেরীগুলোর স্টোররুমে। সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি হলো সেটা হচ্ছে, এই হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় নোটবুকের অনেকখানিই গেলো হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে। ১৫১৯ সালে মেলজি যে মূল ১৩০০০ পৃষ্টা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল, তার মাত্র অর্ধেকের সামান্য বেশি, মোটামুটি ৭০০০ পৃষ্ঠার খোঁজ জানতে পারা যায়। বেশিরভাগই বর্তমানে সরকারী সংগ্রহ হিসাবে আছে, সামান্য কিছুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রহেও আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে কোডেক্স হ্যামার। বিখ্যাত হওয়ার কারণ হচ্ছে যে, বিল গেট ১৯৯৪ সালে ‘মাত্র তিরিশ মিলিওন ডলার’ দিয়ে কিনে নেন এটা। লিওনার্দো নোটবুক গুলো সাধারনত এর মালিকের নামে হয়ে থাকে। যেমন কোডেক্স হ্যামারের মালিকানা হ্যামার ইনস্ট্যুট অব ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে ছিল বলে এর নামকরন এভাবে হয়েছিল। তবে বিল গেট তার নিজস্ব কিছু কারণে তার নামে কোডেক্সের নামকরন না করে এর পুরনো নামই বহাল রাখেন।

লিওনার্দোর নোটবুকের এই হারিয়ে যাওয়া এবং একে নিয়ে সংশয় সৃষ্টির প্রভাব পড়েছিল মানব সভ্যতার উপরও। লিওনার্দোর বৈজ্ঞানিক কাজসমূহ প্রায় দুইশ’ বছর সভ্যতার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। লিওনার্দো যে ধারণাগুলোকে আবিষ্কার করেছিলেন, কিন্তু প্রকাশ করেননি সেই সমস্ত ধারণাসমূহ আবার নতুন করে আবিষ্কার করেছেন অন্য বিজ্ঞানীরা।

আজকের যুগে যে কোন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারই সাধারণত যথার্থতা যাচাইয়ের পর পরই ছাপা হয়ে যায় কোন বৈজ্ঞানিক জার্নালে। যদি খুব গুরুত্বপুর্ণ আবিষ্কার হয় তবে তা রাতারাতি সংবাদপত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় সারা বিশ্বে। বিজ্ঞানের এই প্রকাশনা শুরু হয়েছিল মাত্র উনবিংশ শতাব্দীতে। তার আগ পর্যন্ত সারা দুনিয়ার বিজ্ঞানীরা সাধারনত বিভিন্ন ধরনের অর্গানাইজেশন যেমন রয়াল সোসাইটি কর্তৃক সৃষ্ট বিশেষায়িত প্রকাশনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু নিউটনেরও দু’শো বছর আগে লিওনার্দোর সময়ে একমাত্র যে উপায়ে বৈজ্ঞানিক ধারণাসমূহ প্রকাশ করা যেত তা হচ্ছে সেই বিষয়ে একটি বই প্রকাশ করা। এভাবেই গ্যালিলিও এক গাদা বই প্রকাশের মাধ্যমে বিজ্ঞানের ইতিহাসের গতিপথ পালটে দিয়েছিলেন। তার উল্লেখ্যযোগ্য দু’টো বই হচ্ছে, Dialogue on the Chief World Systems, Ptolemaic and Copernican (1632), এবং Discourses Concerning Two New Sciences (1638). কিন্তু লিওনার্দোর অসংখ্য এক্সপেরিমেন্টস এবং সেগুলো থেকে প্রাপ্ত ফলাফল লিখে রাখা নোটবুকগুলো থেকে গেছে অজ্ঞাত। সামান্য কিছু সংখ্যক অভিজাত ব্যক্তি এবং শিল্প সংগ্রাহকদের কাছে শুধুমাত্র জ্ঞাত ছিল ভিঞ্চির নোটবুক। দুঃখের বিষয় হচ্ছে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলগত কোন জ্ঞানই ছিল না। ফলে, লিওনার্দোর অন্তর্জ্ঞান মানব সভ্যতার কাছে থেকে গেছে অজ্ঞাত। প্রায় আড়াইশ বছর পর সেই অন্তর্জ্ঞান নতুন করে আবিষ্কৃত হয়েছে নিউটন, লেইবনিজ, ফারম্যাট, হাইজেনস এবং আরো অসংখ্য বৈজ্ঞানিকের কারণে।

লিওনার্দো ঠিক কখন থেকে নোটবুক লেখা শুরু করেছিল সেটা বলা মুশকিল। কিছু কিছু ছবির পিছনে লিওনার্দো ব্যাক্তিগত নোট লিখে রাখতেন বা যাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে তাদের নাম ধাম লিখে রাখতেন। এরকমই একটি ছবির পিছনে ১৪৮২ সালে লুডোভিকো ফরজাকে লেখা একটি চিঠির ড্রাফটও খুঁজে পাওয়া যায়। এর কয়েক বছর পর থেকেই মুলতঃ বিভিন্ন বিষয়ে পরিষ্কার এবং সুনির্দিষ্ট লেখালেখি খুঁজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে লিওনার্দোর প্রাচ্যে ভ্রমনের কাল্পনিক কাহিনী এবং শহর পরিকল্পনার তার বিস্তারিত ধারণা। কাজেই, টুকরো টাকরা লেখালেখি, চিঠি এবং নিজের জন্যে লেখা নোটগুলোকে বাদ দিলে আমরা তার সিরিয়াস নোট লেখার সময়টাকে ১৪৮৪ সালের প্লেগ শুরু হওয়ার ঠিক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল বলে বলতে পারি।

তা সত্ত্বেও বেশ কিছু কারনে এই সময়ের পরও লিওনার্দোর লেখাগুলোকে সন তারিখ দিয়ে আলাদা করা বেশ ঝামেলার কাজ। তিনি খুব কম সময়ই তার লেখালেখিতে তারিখ দিয়েছেন এবং তার আইডিয়া যাতে কেউ চুরি করতে না পারে সেজন্য লিওনার্দো মিরর ইমেজের মত অদ্ভুত উপায়ে তার নোটগুলোকে লিখতেন। ডান থেকে বামে লিখতেন তিনি এবং অক্ষরগুলো উল্টোদিকে ঘোরানো থাকতো। আয়নার সামনে নিলেই শুধুমাত্র প্রতিবিম্ব দেখে বোঝা যেতো আসলে কি লেখা আছে। এছাড়া সেগুলোর মধ্যেও তিনি তার নিজস্ব কোড ঢুকিয়ে দুর্বোধ্য করে দিতেন যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে তিনি কি লিখেছেন।
এ ছাড়াও বিস্ময়কর হচ্ছে জীবনের পুরো সময়টাই তার হাতের লেখা মোটামুটি একই রকমের ছিল। বিভিন্ন বয়সে হাতের লেখার তারতম্য সাধারণত বিশ্লেষকদের বিখ্যাত গবেষকদের ম্যানুস্ক্রিপ্ট বা নোটকে বুঝতে বা সেগুলো কখন লেখা হয়েছে সেই সন তারিখ উদ্ধার করতে সাহায্য করে। লিওনার্দোর মত আইজাক নিউটনও তার নোটে বেশিরভাগ সময়ই সন তারিখ লিখতেন না। কিন্তু তার নোটগুলোকে ছয়টি পরিষ্কারভাগে ভাগ করা যায় যেখানে তার হাতের লেখা বা তার লেখার উপকরণ অনেক খানি ভিন্ন। এর ফলে তার রিপোর্ট এবং বর্ণনাগুলোকে ধারাবাহিকভাবে সাজাতে দারুনভাবে কাজে লেগেছিল। কিন্তু হাতের লেখা দেখে যেহেতু ঠিকমত বোঝা যায় না, তাই লিওনার্দোর লেখালেখি গুলোকে ধারাবাহিকভাবে সাজানোর নিশ্চিত উপায় হচ্ছে তার কাজের প্রকৃতি দেখে। যখন লিওনার্দো পাতার পর পাতা ভরে ফেলেছে সেট ডিজাইন, মঞ্চের জন্য ব্যবহৃত জিনিষপত্রের ডিজাইন করে তখন বোঝা যায় যে সেগুলো এসেছে ১৪৯০ দশকের প্রথম দিকে যখন তিনি মিলানের ডিউক এবং ডাচেসদের কাজ নিয়ে নিমগ্ন ছিলেন। যখন তিনি নোটবুক ভরে ফেলেছেন জ্যামিতি এবং প্রাথমিক ক্যালকুলেশন দিয়ে তখন লুকা পাসিওলির প্রভাব টের পাওয়া যায়। লুকার সাথে লিওনার্দোর প্রথম দেখা হয়েছিল ১৪৯৬ সালে।

লিওনার্দোর নোটবুকের ধূসর ইতিহাস এবং বিচ্ছিন্নভাবে পৃষ্ঠাসমূহ উদ্ধার করার কারণে তার লেখার পাঠ্যোদ্ধার করার সমস্যা ছাড়াও সেগুলোর সন তারিখ ঠিক করা এবং এবং শব্দসমূহের সঠিক অর্থ ব্যাখ্যা করা অত্যন্ত জটিল ছিল। তার নোটবই থেকে পৃষ্ঠা ছিড়ে নিয়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে, না বুঝে নষ্ট করা হয়েছে বেশ কিছু এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে নোটবুকের পৃষ্ঠাসমূহ পুরোপুরিই হারিয়ে গেছে চিরতরে। এর ফলে পরবর্তীতে তার চিন্তার প্রবাহ এবং ধারণাসমূহের অগ্রগমন খুঁজে পেতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে গবেষকদের।

লিওনার্দো সবসময় আচ্ছন্ন ছিলেন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে এবং সেই সাথে পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণের মাধ্যমে যে কোন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে চাইতেন। আর এর সুস্পষ্ট ছাপ রয়ে গেছে তার লেখালেখিতেও। খেয়ালী রাজকুমারের মত এলোমেলো ভাবে নোটবুকের পৃষ্ঠায় ভিঞ্চি তার চিন্তাভাবনা লিখে রেখে গেছেন। অপটিকসের উপর কোন লেখার পাশেই হয়তো আঁকা হয়েছে কোন মুখের স্কেচ, বা কোন নির্দিষ্ট রঙ কিভাবে তৈরি করা যাবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বা কোন নির্দিষ্ট রোগ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে তার উপায়।

তার নোট এবং ড্রয়িং থেকে দেখা যায় যে লিওনার্দো ব্যাপক বৈচিত্র্যময় বিষয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। গ্রোসারি লিষ্ট এবং কার কার কাছে টাকা পাওনা রয়েছে এমন তুচ্ছ বিষয় থেকে শুরু করে উইং বা পানির উপর হাটার জুতার ডিজাইনও রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যে লিওনার্দোর নোটগুলোকে যৌক্তক বিন্যাসে সাজানো যায় না। তিনি একমুখী চিন্তার অধিকারী ছিলেন না। কোন সমন্বয় বা সংযোগ ছাড়াই এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে গেছেন তিনি। কখনো কখনো স্ববিরোধিতাও করেছেন। কিন্তু যেহেতু প্রায় অর্ধেক পৃষ্ঠা সমূহই হারিয়ে গেছে কাজেই কোন একটি বিষয়ের উপর তার চুড়ান্ত চিন্তাভাবনা কি তা বর্তমানে জানা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। আর মজার বিষয় হচ্ছে যে, সবকিছুই তিনি অসমাপ্ত রেখে গেছেন। লিওনার্দোর 2কাজের ভঙ্গি দেখে মনে হতে বাধ্য যে, তার ধারণা ছিল সময় অফুরন্ত। আহারে! সত্যিই যদি তা হতো!

লিওনার্দো আলোকবিজ্ঞান (Optics), বলবিজ্ঞান (Mechanics), অঙ্গ-ব্যবচ্ছেদ বিজ্ঞান (Anatomy), ভূতত্ত্বে (Geology) বিস্ময়কর সব আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একধরনের প্লাস্টিক সৃষ্টি করেছিলেন, একধরনের ক্যামেরা তৈরি করেছিলেন, কন্টাক্ট লেন্স এবং স্টীম ইঞ্জিন নিয়ে লিখে গেছেন, আকাশ কেন নীল তা ব্যাখ্যা করেছেন, এবং শরীরের প্রতিনিধিত্ব করা ভিজ্যুয়াল টেকনিক আবিষ্কার করে গেছেন যা আজকের দিনে শুধুমাত্র CAT স্ক্যানের মাধ্যমেই দেখতে পাওয়া যায়।
যক্ষের ধনের মত আটকে না রেখে কেন যে তিনি তার নোটবুক বই আকারে বের করেননি তা চিরকাল এক রহস্যই রয়ে গেছে।

এইবার তার অঙ্কিত ছবিগুলোর বর্ণনা করছি। ছবিগুলো পর্যায়ক্রমে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির জীবনকালে যে ক্রমান্বয়ে অঙ্কিত হযেছিল সেই ভাবেই দিলাম্ এতে করে তার আঁকানোর ধারাটাও আপনার বুঝতে পারবেন।





এই ছবিটির নাম "ম্যাডোনা উইথ ফ্লাওয়ার"। ১৪৭৮ সালে দা ভিঞ্চি এই তৈলচিত্রটি অংকন করেন কলম আর কালি দিয়ে। বর্তমানে এটি রক্ষিত আছে লুভর জাদুঘরে। এই ছবিটিরও কয়েকটি খসড়া প্ওয়া পাওয়া যায়।




"ম্যাডোনা উইথ ফ্লাওয়ার": খসড়া- ০১




"ম্যাডোনা উইথ ফ্লাওয়ার": খসড়া- ০২






এই বিখ্যাত ছবিটির নাম "অ্যাডোরেশন অফ ম্যাজাই"। ১৪৮১-৮২ সালে ভিঞ্চির আঁকানো এই তৈল চিত্রটি আছে ফ্লোরেন্সের
Galleria degli Uffizi গ্যালারীতে।
এই ছবিটি আকাঁনোর সময় তার আরো ২টা এই ছবিরই খসড়া পাওয়া যায়। ছবি সংগ্রাহকরা রেখে দিতে পারেন খসড়াগুলো। কারন মূল ছবির মতই দুস্প্রাপ্য এই খসড়া ছবি গুলোও।



"অ্যাডোরেশন অফ ম্যাজাই": খসড়া-০১





"অ্যাডোরেশন অফ ম্যাজাই": খসড়া-০২






vitruvian নামের এই চবিটি তিনি আঁকেন ১৪৯২ সালে। ৩৪৩২৪৫মি.মি এর এই ছবিটি তিনি আঁকেন
কলম, কালি, watercolour এবং metalpoint দিয়ে। বর্তমানে এটি সংরক্ষিত আছে ভেনিসের Gallerie dell'Accademia গ্যালারীতে।







এই ছবিটির পরিচয় নতুন করে দেয়ার কিছু নেই। বিখ্যাত "দ্যা লাস্ট সাপার" ছবিটি এটি। ১৪৯৮ সালে মিশ্র পদ্ধতিতে ৪৬০x ৮৮০ সে.মি. দৈর্ঘ্যের এই ছবিটি তিনি আঁকান মিলানের "Convent of Santa Maria delle Grazie" এর দেয়ালে। পরবর্তীতে এই ছবিটির আরেকটি প্রতিকৃতি তিনি আকেঁন। সেটিও দিয়ে দিলাম লিওনার্দো ভক্তদের জন্য্।




"দ্যা লাস্ট সাপার ২"


এই ছবিগুলো আঁকানোর সময় তিনি কিছু খসড়া করেছিলেন। যা আজ শিল্পবোদ্ধাদের অবাক করে দেয় তার অধ্যবসায় দেখে। সেগুলোও উপস্থাপন করছি।



"দ্যা লাস্ট সাপার": খসড়া-০১




"দ্যা লাস্ট সাপার": খসড়া-০২




"দ্যা লাস্ট সাপার": খসড়া-০৩




"দ্যা লাস্ট সাপার": খসড়া-০৪






ছবিটির পরিচয় দেয়ার কি দরকার আছে?১৫০৩-১৫০৫ সালের মধ্যে আঁকা এই ছবিটি বর্তমানে রক্ষিত আছে ফ্রান্সের লুভর মিউজিয়ামে।
৭৭x ৫৩ সে.মি. এর এই তৈলচিত্রটি আজো রহস্য আর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।







এই ছবিটির নাম "লিডা"। এই নারী চরিত্রটি ম্যাডোনার মত বিখ্যাত না হলেও একাধিক ছবির বিষয়বস্তু হিসেবে বুঠে এসেছেন লিওনার্দোর তুলির আচড়ে।১৫০৩-১৫০৭ সালে এই ছবিটি তিনি একেঁছিলেন কালো চক, খলম আর কালি দিয়ে। ১৭৭x১৪৭মি.মি. এর এই ছবিটি বর্তমানে সংরক্ষিত আছে Royal Library, Windsor এ। এই ছবিটিরও একাধিক খসড়া পাওয়া যায়। যার কোন কোনটি বলা চলে পূর্ণাঙ্গ চিত্রই। খসড়াগুলো দিয়ে দিলাম শিল্পপিপাসুদের জন্য।




"লিডা": খসড়া-০১




"লিডা": খসড়া-০২




"লিডা": খসড়া-০৩




"লিডা": খসড়া-০৪






ব্লগে এই চবিটি অনেকেই হয়তো দেখেছেন। জানি অনেকে বেশ অবাকও হচ্ছেন। ছবিটির পরিচয় দেই। Female head বা La Scapigliata
নামে পরিচিত এই ছবিটি লিওনার্দো আঁকান ১৫০৮ সালে।
২৭x ২১ সে.মি. এর এই ছবিটি বর্তমানে সংরক্ষিত আছে পার্মার
Galleria Nazionale গ্যালারীতে।






এই বিখ্যাত ছবিটির নাম "সেইন্ট জন"। ১৫০৮-১৫ সালে আঁকানো এই ছবিটি লাল চক দিয়ে আঁকানো।২৪x১৮ সে.মি এর আঁকানো এই ছবিটি বর্তমানে সংরক্ষিত আছে Formerly Museo del Sacromonte, Varese তে। এই ছবিটিরও ১টা খসড়া পাওয়া যায় পরবর্তীতে।




"সেইন্ট জন": খসড়া-০১



লিওনার্দো গীর্জা ও রাজপ্রাসাদের দেয়ালে চিত্রাঙ্কন এবং রাজকীয় ব্যাক্তিবর্গের ভাস্কর্য নির্মাণের পাশাপাশি বেসামরিক ও সামরিক প্রকৌশলী হিসাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান জ্ঞানের প্রয়োগ, অঙ্গব্যাবচ্ছেদবিদ্যা, জীববিদ্যা, গণিত ও পদার্থবিদ্যার মত বিচিত্র সব বিষয়ের ক্ষেত্রেতিনি গভীর অনুসন্ধিৎসা প্রদর্শন করেন এবং মৌলিক উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দেন। তার ই কিছু নমুনা নিচে দেখুন,




এই ছবিটির গল্প আমরা অনেক শুনেছি। লিওনার্দো পাখির ওড়া পর্যবেক্ষন করে হেলিকপ্টার জাতীয় উড়োযানের ডিজাইন করেছিলেন। এই সেই বিখ্যাত পাখির ওড়া পর্যবেক্ষন নিয়ে তার নিজের আঁকানো গবেষনার একটি পৃষ্টা। কলম আর কালিতে আঁকানো ২১০x ১৫০মি.মি. এর এই পৃষ্ঠাটি রক্ষিত আছে তুরিনের Biblioteca Reale তে।








আমি নিজে খুব অবাক হযেছি এই ছবি ২টা দেখে। হয়তো নিজের পড়াশুনার ব্যাপার বলেই। এতটাই অদ্ভুত নিখুঁত এইগুলো যে, তা বুঝবার জন্য মেডিকেলে পড়তে হয় না। দুটি ছবিই সংরক্ষিত আছে মিলানের Biblioteca Ambrosiana এ।



আসলে উনাকে নিয়ে ভালো করে লিখতে গেলে অনেক বড় পরিসরের দরকার। সেই সুযোগ থাকলেও ধৈর্য়্য নেই(লেখক ও ফাঠক উভয়ের ই ;) ।তাই আজ এখানেই থামছি। ধৈর্য্য ধরে এতক্ষন পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আবার দেখা হবে অশা করি। ভালো থাকবেন।


তথ্যসূত্রঃ
উইকিপিডিয়া Click This Link
ইউরোপিয়া.ইউ http://www.ec.europa.eu/education
লিওনার্দো.নেট http://www.leonardo.net/
আর্ট সাইক্লোপিডিয়া.কম http://www.artcyclopedia.com
ওয়েব গ্যালারী অফ আর্ট http://www.wga.hu/
মুক্তমনা http://www.mukto-mona.com/

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home