সোয়াইন ফ্লু থেকে সাবধান থাকুন
সম্প্রতি দেশে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কাররই এ ব্যাপারটা আর অজানা নয়। নিজে সাবধান হোন সুস্থ থাকুন আর দেখুন সোয়াইন ফ্লু নিয়ে কোথায় কি হচ্ছে।
সোয়াইন ফ্লুকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য
সোয়াইন ফ্লু নিয়ে শুরু হয়েছে বাণিজ্য। এক শ্রেণীর লোক সোয়াইন ফ্লু’র আতংক সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা আয়ের ফন্দি করেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সোয়াইন ফ্লু মহামারি আকার ধারণ করলেও পরিস্থিতির তুলনায় মৃতের সংখ্যা সীমিত। এই সময় ভাইরাল ফ্লুসহ নানা রোগে এরচেয়ে বেশি লোক মারা যায়। এ কারণে ভারত সরকার সোয়াইন ফ্লু নিয়ে জনগণ আতংকিত হয় এমন কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। সোয়াইন ফ্লু’র চিকিৎসা স্বাস্থ্য বিভাগ করে যাচ্ছে। এ কারণে ভারতে কোন ধরনের হৈ চৈ নেই এবং জনগণের মধ্যে কোন আতংক নেই বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সোয়াইন ফ্লু হঠাৎ করে বেশ কিছু দেশে মহামারি আকার ধারণ করায় তা প্রতিরোধে চিকিৎসাসহ করণীয় এর ব্যাপারে গাইড লাইন দিয়েছে। ওষুধসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এই সহযোগিতা বাংলাদেশও পেয়েছে। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে ভ্যাকসিন বিনামূল্যে বাংলাদেশকে দেয় কিনা এই নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সোয়াইন ফ্লু বাংলাদেশে বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তা সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সরকারি প্রস্তুতিও যথেষ্ট। অন্য কারো এই রোগকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। এখন জরুরি দরকার সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি। সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধ সম্পর্কে জনগণ সচেতন থাকলে ঘরে বসে তা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত আরো একটি শিশু ঢাকার বাইরে মারা গেছে। শিশুটি তিন সপ্তাহ যাবৎ ঢাকার বাইরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। অবশেষে গত শুক্রবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বলে একটি সূত্রে জানা যায়। এই নিয়ে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০০ জন এবং মারা গেছে ৩ জন।
দেশের খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, সোয়াইন ফ্লু আর ইনফ্লুয়েঞ্জা একই। হাঁচি, কাশি ও জ্বর থাকলে ৫/৬ দিন পর রোগী ভাল হয়ে যায়। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ও কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিংবা হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দিলে সহজে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে কোন ধরনের আতংকিত হওয়ার কারণ নেই এবং ইহা সাধারণ রোগ বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। জাতীয় ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটির সদস্য ও মিটফোর্ড হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এমএন হুদা বলেছেন, ৫টি ওষুধ কোম্পানি সোয়াইন ফ্লুর ক্যাপসুল ওসেল্টামিভির তৈরি করে বাজারজাত শুরু করছে। এর মূল্য সম্পর্কে কমিটিকে জানানো হয়নি। তার মতে, দেশে প্রতিবছর এই মৌসুমে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের লোক মারা যায়। কিন্তু সোয়াইন ফ্লুতে মৃতের সংখ্যা সারা বিশ্বে গড়ে অনেক কম। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতংকিত হওয়ার কারণ নেই। এই রোগ প্রতিরোধ করার নিয়ম-কানুন জনগণের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচার করলে ঘরে বসে সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
একশ্রেণীর বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষার যন্ত্রপাতি ও রিএজেন্ট আমদানি করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দেনদরবার শুরু করে দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, সোয়াইন ফ্লু সনাক্ত করার যন্ত্রপাতি ও রিএজেন্ট শুধু আমেরিকার আটলান্টার পরীক্ষাগারে ছিল। সারা পৃথিবী থেকে সোয়াইন ফ্লুসহ অজ্ঞাত ভাইরাস সনাক্ত করার জন্য স্যাম্পল উক্ত পরীক্ষাগারে প্রেরণ করা হয়। এ বছর সোয়াইন ফ্লু বেশ কয়েকটি দেশে মহামারি আকার ধারণ করায় সেই সকল দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে সনাক্ত করার যন্ত্রপাতি ও রিএজেন্টসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে সোয়াইন ফ্লু সনাক্ত করা কোন অবস্থায় সম্ভব নয়। এই পরীক্ষার নামে সহজ সরল লোকজনের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার শুধু কৌশল হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত তিন লাখ রোগীর প্রয়োজনীয় ওষুধ তার অধীনে মওজুদ রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। সোয়াইন ফ্লু রোগের ৫টি কোম্পানির ওষুধের মূল্য আজ রবিবার মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কমিটিতে নির্ধারণ করা হবে। অথচ এর আগে কোন কোন কোম্পানি ওষুধ বাজারজাত শুরু করে দিয়েছে। সোয়াইন ফ্লু’র চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুুযায়ী দেশীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রস্তুত করেছে।
0 Comments:
Post a Comment
Subscribe to Post Comments [Atom]
<< Home